পদ্মবাটান বিরল দর্শন পান্থপরিযায়ী পাখি (চলার পথের প্রজাতি)। প্রজাতির স্ত্রী-পুরুষ পাখির নাম ভিন্ন। শীতের আগে অল্প সময়ের জন্য আমাদের দেশে আশ্রয় নেয়। নদীর চর, উপকূলীয় এলাকা কিংবা মোহনা অঞ্চলে কয়েকটা দিন কাটিয়ে বিদায় নেয়। একাকী অথবা ছোট দলে ঘুরে বেড়ায়। এরা নিশাচর হলেও সন্ধ্যালগ্নে শিকারে বের হয়। কর্দমাক্ত এলাকায় খাদ্যের সন্ধানে ঘুরে বেড়ায়। খাদ্যের সন্ধান পেলে ঠোঁট কাদার ভেতর ঢুকিয়ে খাবার খোঁজে। অনেক সময় মাথাটাও কাদার ভেতর ঢুকিয়ে দেয়। স্বভাবে শান্ত। ডাকে নিচুস্বরে ‘চাক চাক’ শব্দে। ওড়ার সময় কণ্ঠস্বর পাল্টে যায়, তখন করুণ সুরে ডাকে ‘টু-উইট, টু-উইট’। প্রজনন মৌসুমে পুরুষ পাখি খানিকটা খ্যাপাটে গোছের হয়ে ওঠে। দুই পুরুষ পাখি তখন লড়াই বাধিয়ে বসে। জিতে যাওয়া পুরুষ পাখি স্ত্রী পাখির সঙ্গে মিলনের সুযোগ পায়।
এ পাখির বাংলা নামঃ গেওয়ালা বাটান বা ‘পদ্মবাটান’ ইংরেজি নামঃ রাফ (Ruff) | স্ত্রী পাখির নাম: রীভ্ (Reeve), বৈজ্ঞানিক নামঃ Philomachus pugnax | এরা জোয়ালা বা জিউয়ালা বাটান নামেও পরিচিত |
আরো পড়ুন…
•শুক্তিভোজী বাটান
•কাদা বাটান
•লাল নুড়িবাটান
•কাঁকড়াভোজী বাটান
•কালোবুক বাটান
•ছোট বাবুইবাটান
•গুলিন্দা বাটান
•পাতি বাটান
পুরুষ পাখি লম্বায় ২৯-৩২ সেন্টিমিটার, স্ত্রী পাখি ২৫-২৬ সিন্টিমিটার। মাথা, ঘাড় ফিকে। পিঠে বাদামি পালক। প্রতিটি পালকের মধ্যখানে কালো ছোপ। যা দূর থেকে মাছের আঁশের মত মনে হয়। ডানার নিচের দিক সাদা। বুক ও পেট গাঢ় বাদামি। নিচের দিকটা সাদাটে। নিতম্বের দু’পাশে ডিমের ন্যায় সাদা ফোঁটা। কেবল উড়লে তা নজরে পড়ে। লেজ বাদামি লাল। চঞ্চু গাঢ় বাদামি, খাটো। পা লম্বাটে, উজ্জ্বল কমলা। প্রজনন মৌসুমে পুরুষ পাখির রঙ বদলায়। এ সময় মাথা থেকে গলা পর্যন্ত রঙিন ফোলানো পালক দেখা যায়। এছাড়াও চঞ্চু লালচে-কমলা রঙ ধারণ করে। স্ত্রী পাখির রঙ ওই সময় কিছুটা নিষ্প্রভ দেখায়।
প্রধান খাবারঃ কেঁচো, কীটপতঙ্গ, ছোট মাছ ইত্যাদি। প্রজনন মৌসুম মধ্য মার্চ থেকে জুনের মাঝামাঝি পর্যন্ত। বাসা বাঁধে উত্তর এশিয়ার উত্তরাঞ্চলে। ডিম পাড়ে ৩-৪টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ২০-২৩ দিন।
লেখকঃ আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।