
বাদামি মাছরাঙা এদের বিস্তৃতি বঙ্গোপসাগরের উপকূল থেকে মিয়ানমার, থাইল্যান্ড ও উত্তর-পশ্চিম মালয়েশিয়া পর্যন্ত। বিশ্বে এ প্রজাতিটি এখন বিপদগ্রস্ত হলেও সুন্দরবন অঞ্চলে ব্যাপকভাবেই নজরে পড়ে। এরা দেশের স্থায়ী বাসিন্দা; সুলভদর্শন। সাধারণত জোয়ার-ভাটায় বহমান নদ-নদীতে বিচরণ করে। বিশেষ করে নদ-নদীর কিনারে গাছের উঁচু শাখায় চুপ করে বসে থাকে।
শিকার দৃশ্যমান হলে আচমকা ঝাঁপিয়ে পড়ে শিকারের ওপর। কণ্ঠস্বর কর্কশ। হঠাৎ শুনলে যে কেউ ভড়কে যেতে পারেন। জলের ওপর দিয়ে ওড়ার সময় জোরে জোরে ডাকে ‘কা-কা-কা-কা’। মন ভালো থাকলে করুণ সুরে অনবরত শিস দিতে থাকে। একাকী বিচরণ করলেও জোড়ের পাখি কাছাকাছিই থাকে। শিস দিয়ে অথবা কর্কশকণ্ঠে ভাবের আদান-প্রদান করে। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে প্রজাতিটি সংরক্ষিত।
পাখির বাংলা নামঃ বাদামি মাছরাঙা বা খয়রাপাখ মাছরাঙা । ইংরেজি নামঃ ব্রাউন উইংড কিংফিশার, (Brown-winged Kingfisher) বৈজ্ঞানিক নামঃ Halcyon amauroptera |
আরো পড়ুন…
•মেঘহও মাছরাঙা
•ঝুঁটিয়াল মাছরাঙা
•কালোটুপি মাছরাঙা
•ব্লাইথের ছোট মাছরাঙা
•ধলাগলা মাছরাঙা
•নীলকান মাছরাঙা
•লাল মাছরাঙা
•ছোট মাছরাঙা
•পাকড়া মাছরাঙা
প্রজাতির গড় দৈর্ঘ্য ৩৬ সেন্টিমিটার। প্রাপ্তবয়স্কদের মাথা ও ঘাড় বাদামি-কমলা। কাঁধ ও ডানা কালচে-বাদামি। কোমরের দিকে ফিরোজা রঙের পালক। লেজ নাড়লে বা ডানা ঝাঁপটালে কেবল তা নজরে পড়ে। গলা, বুক ও পেট বাদামি-কমলা। শরীরের তুলনায় ঠোঁট খানিকটা লম্বা। শক্ত, মজবুত ঠোঁট প্রবাল-লাল। অগ্রভাগ কালচে-বাদামি। চোখের তারা বাদামি। পা ও পায়ের পাতা উজ্জ্বল লাল। স্ত্রী-পুরুষ দেখতে একই রকম। অপ্রাপ্ত বয়স্কদের রং ভিন্ন। তাদের রং ফ্যাকাসে।
প্রধান খাবারঃ মাছ, কাঁকড়া ও সরীসৃপ। প্রজনন মৌসুম মার্চ থেকে এপ্রিল। বাসা বাঁধে জলাশয়ের খাড়া পাড়ে গর্ত বানিয়ে। গর্তের মাপ ১০ সেন্টিমিটার চওড়া এবং ৫০-৬০ সেন্টিমিটার দৈর্ঘ্য। ডিম পাড়ে ৩-৪টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৮-২০ দিন।
লেখকঃ আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।