হঠাৎ দেখলে লাজুক, খানিকটা শান্ত স্বভাবের বলেই মনে হবে। কিন্তু ছোট আকৃতির এ পাখিটা লাজুক তো নয়-ই শান্তও নয় একেবারে। বেজায় চঞ্চল। এডালে ওডালে কেবলই ওড়াউড়ি। মনে হবে ভারি কাজের পাখি। সারাক্ষণ ব্যস্ত। এক দণ্ড চুপ করে বসার মত সময় তার হাতে নেই। পরিযায়ী পাখি। শীতে আমাদের দেশে চট্টগ্রামের চুনতি অরণ্যে দেখা মেলে। এছাড়াও পাহাড়ী অঞ্চলের চির সবুজ বনেও এদের ঘোরাফেরা করতে দেখা যায়। প্রজনন সময় ঘনিয়ে এলে ফিরে যায় নিজ বাসভূমি—হিমালয়াঞ্চলে।
আকারে ছোট তবে দেখতে ভারি সুন্দর। তবে পুরুষরা বেশি সুন্দর। স্ত্রী পাখির ঝুটি কেমন বেমানান বেমানান লাগে। তবে পুরুষের তুলনায় স্ত্রী পাখি বেশি চঞ্চল। প্রজনন মৌসুমে ওদের চঞ্চলতা বেড়ে যায় বহুগুণ। শীতের আগে আগে দল বেঁধে এরা যাত্রা করে দক্ষিণ দিকে। দলে যে খুব বেশি পাখি থাকে, তা নয়। বড়জোর শ’খানেক পাখি থাকে এক দলে। তখন ছোট-খাট পাহাড়ের ওপর বেশ ওড়াউড়ি করতে দেখা যায় এদের। শিকারের খোঁজে উচ্চৈঃস্বরে ‘টিসিট-টিসিট-টিসিট-টিসিটি’ সুরে ডাকে। এরা গাছের ডালে ডালে কিংবা লতা-পাতার ওপর শিকার খোঁজে। প্রজনন সময়ে এদের স্বরের পরিবর্তন হয়। তখন তা শুনতে আরো মধুর লাগে।
এ পাখির বাংলা নামঃ সিঁদুর সিঁথি তিতপাখি, ইংরেজী নামঃ ফায়ার ক্যাপড্ টিট, (Fire capped tit), বৈজ্ঞানিক নামঃ Cephalopyrus flammiceps| গোত্রের নাম: ‘পারিদি’|
লম্বায় ৮-১০ সেন্টিমিটার। ঠোঁট কালচে। পুরুষ পাখির দেহের উপরিভাগ জলপাই-হলুদ। ডানা ডোরা কাটা। কপালের দিক থেকে গলা পর্যন্ত সিঁদুর লাল। গলার নিচ থেকে বুক পর্যন্ত হলুদ, তার পরের অংশ ধূসর সাদা। শীতে রঙ বদলায় এ সময় কপাল ও গলার সিঁদুর লাল উধাও হয়ে যায়। স্ত্রী পাখি দেখতে অনেকখানি ম্লান। তবে প্রজনন মৌসুমে রঙ হলদেটে হয়।
প্রধান খাবারঃ পতঙ্গ এবং ফলের মধু। প্রজনন সময় এপ্রিল থেকে মধ্য জুন। প্রজনন ভূমি অরুণাচল থেকে পাকিস্তানের উত্তরাংশ পর্যন্ত। এরা সাধারণত ভূমি থেকে ৬-১২ মিটার উচ্চতার গাছের দুই ডালের ফাঁকে পেয়ালা আকৃতির বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ২টি। এদের সম্পর্কে এখনো খুব বেশি কিছু জানেন না পক্ষীবিশারদরা।
লেখকঃ আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।