এই পাখির বাংলা নামঃ লালপা পি-উ । ইংরেজি নামঃ কমন রেডশ্যাঙ্ক, (Common Redshank) | বৈজ্ঞানিক নামঃ Tringa totanus | অন্য প্রজাতির নাম সবুজপা পি-উ।
মূলত এদের আবাসস্থল মধ্য-পূর্ব এশিয়া থেকে বৈকালিয়া হ্রদ পর্যন্ত। শীতকালে পরিযায়ী হয়ে বিভিন্ন দেশে যায়। বাংলাদেশ, ভারত, মিয়ানমার, দক্ষিণ চীন, মালয়েশিয়া ও ফিলিপাইনে বেশি বিস্তৃতি ঘটে। এরা অতি সুলভদর্শন জলচর পাখি। স্বভাবে শান্ত। কারও সঙ্গে গায়েপড়ে ঝগড়াঝাটি করে না। চেহারা মায়াবী ধাঁচের। নজরকাড়া চোখের গড়ন।
শীত মৌসুমে দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। ওই সময় জলাশয় এলাকায় ছোট-বড় দলে শিকার খুঁজতে দেখা যায়। উপকূলীয় অঞ্চলে বেশি নজরে পড়ে। জোয়ার-ভাটার খাঁড়ির মুখে দাঁড়িয়ে খাবারের সন্ধান করে। কণ্ঠস্বর বেশ চমৎকার। অনেকটা বাঁশির সুরের মতো আওয়াজ করে। ‘টিইউ-টিইউ-টিইউ’ সুরে ডেকে ওঠে। হঠাৎ শুনলে যে কেউ বাঁশির আওয়াজ বলে ভুল করবেন। বিশেষ করে নির্জনে সুর কানে এলে মন বিশাদে ভর ওঠে। ভয় পেলে বা উড়তে উড়তে পিউ-পিউ সুরেও ডাকে। সুরে মুগ্ধ হয়ে দেশের বিশিষ্ট পাখিবিশারদরা এদের নাম দিয়েছেন ‘মোহন বেণু’।
এ প্রজাতির গড় দৈর্ঘ্য ২৭-২৯ সেন্টিমিটার। মাথা, ঘাড়, বুক শরীরের উপরের পালক বাদামি-ধূসর রেখা। ডানার পেছনের পালক সাদা। তলপেট থেকে বস্তিপ্রদেশ পর্যন্ত সাদাটে। ঠোঁট লম্বা সোজা। ঠোঁটের গোড়া কমলা-লাল, অগ্রভাগ কালচে। শরীরের তুলনায় পা খানিকটা লম্বা। পায়ের বর্ণ কমলা-লাল, নখ কালো। চোখের বলয় সাদা। প্রজনন সময় রঙ কিছুটা গাঢ় দেখায়।
প্রধান খাবারঃ ছোট মাছ, জলজ পোকামাকড়। প্রজনন মৌসুম বসন্তকাল। প্রজননের আগ মুহূর্তে নিজেদের বসতভিটায় চলে যায়। বাসা বাঁধে ভাসমান জলদামের ওপর। বাসা বানাতে উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে জলজ ঘাস লতাপাতা। ডিম পাড়ে ৩-৫টি। স্ত্রী-পুরুষ পালা করে ডিমে তা দেয়। ফুটতে সময় লাগে ২৩-২৫ দিন।
লেখকঃ আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।