বিপন্ন প্রজাতির পাখি শ্বেত শকুন । আইইউসিএন প্রজাতিটিকে লাল তালিকাভুক্ত করেছে। পঞ্চাশ বছর আগে বাংলাদেশে এ পাখি দেখা যাওয়ার রেকর্ড রয়েছে। তবে এখন দেখা যায় না। এতদঞ্চলের মধ্যে অবশ্য এর দেখা মেলে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে। পাখিবিশারদদের ধারণা, পশ্চিমবঙ্গ থেকে মাঝে মধ্যে পরিযায়ী হয়ে এ পাখির বাংলাদেশে আগমন ঘটলেও ঘটতে পারে। শ্বেত শকুনের বৈশ্বিক বিস্তৃতি গ্রীষ্মমণ্ডলীয় এলাকা (আরব), দক্ষিণ মধ্যএশিয়া, উত্তর-পশ্চিম ভারত, পূর্ব-দক্ষিণ ইউরোপ এবং উত্তর আফ্রিকা।
অন্যসব প্রজাতির শকুনের মতো দেখতে এরা কদাকার নয়, সুশ্রী। ঈগলাকৃতির চেহারা। শ্বেত শুভ্র পালকের সঙ্গে কালো পালকের মিশ্রণে দেখতে দারুণ। খোলা মাঠ প্রান্তরে বিচরণ করে। বালিয়াড়ি এলাকা ওদের খানিকটা পছন্দের জায়গা। জোড়ায় কিংবা দলবেঁধে খাদ্যের সন্ধানে বের হয়। সব ধরনের মৃতদেহ এবং সরীসৃপ খেয়ে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে। আবার বিষাক্ত মৃতদেহ খেয়ে এদের জীবনাবসানও ঘটে। প্রজাতির অন্যদের তুলনায় এরা দীর্ঘজীবী। গড় আয়ু ৩৭ বছর।
পাখির বাংলা নামঃ শ্বেত শকুন। ইংরেজি নামঃ স্কেভেঞ্জার ভালচার, (Scavenger Vulture) | বৈজ্ঞানিক নামঃ Neophron percnopterus | এরা ‘ধলা শকুন, মিসরীয় শকুন ও সাদা গিদরি’ নামেও পরিচিত।
আরও পড়ুন…
•লম্বাঠোঁটি শকুন
•রাজ শকুন
•হিমালয়ী গৃধিনী
•ইউরেশীয় গৃধিনী
•লম্বা ঠোঁটি শকুন
এরা দৈর্ঘ্যে কমবেশি ৫৮-৭০ সেন্টিমিটার। ওজন ১৬০০- ২২০০ গ্রাম। স্ত্রী-পুরুষ পাখির চেহারায় তেমন পার্থক্য নেই। হলুদ-কমলা রঙের চামড়ায় আবৃত মুখমণ্ডল। মাথায় কদম ফুলের রোয়ার মতো খাড়া সাদা পালক। ঘাড়, গলা, বুক ও পিঠ ময়লা মিশ্রিত সাদা। ডানার প্রান্ত পালক কালো। সাদা লেজের ডগা ত্রিকোণাকৃতির। উড়ার পালক কালো। উপরের ঠোঁট বড়শির মতো বাঁকানো, অগ্রভাগ শিং কালো, বাদবাকি কমলা-হলুদ। চোখের বলয় হলুদ, তারা বাদামি। পা ও পায়ের পাতা গোলাপি। অপ্রাপ্তবয়স্কদের মুখ ধূসর। দেখতে কালচে-বাদামি।
প্রধান খাবারঃ যে কোনো ধরনের মৃতদেহ বা উচ্ছিষ্ট খাবার এদের প্রধান খাদ্য। খাদ্য তালিকা থেকে বাদ যায় না শামুক, পাখির ডিম, ছোট পাখি কিংবা সরীসৃপও। এদের প্রজনন মৌসুম মার্চ থেকে মে মাস। বাসা বাঁধে পুরনো দালানে কিংবা উঁচু গাছের ডালে। ডিম পাড়ে ১-৩টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ৩৯-৪৫ দিন। যৌবনপ্রাপ্ত হতে সময় লাগে ৬ বছর।
লেখকঃ আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামিস্ট ও বন্যপ্রাণী বিশারদ।