বন কোকিল, কোকিলের জ্ঞাতি ভাই, কিন্তু গলায় সুর নেই! বসন্ত এলে এরা চুপচাপ বসে বসে জ্ঞাতি ভাইদের গান শোনে। গান গাইতে না পারলেও ওরা আমাদের পরিচিত কোকিলে মত অলস বা ফন্দিবাজ নয়। নিজেরাই খেটেখুটে বাসা বানায়। ডিম পেড়ে নিজেরাই তা দিয়ে বাচ্চা ফুটিয়ে লালন-পালন করে। এক কথায় সংসারি। এরা দেশের স্থানীয় প্রজাতির পাখি হলেও সচরাচর দেখা যায় না। থাকে বন-বাদাড়ে। এদেরকে একাকী বা এক জোড়ার বেশি কোথাও দেখা যায় না।
বসন্তে লোকালয়ে তবে নীরবে থাকে। কিছু দিন পর আবার বনে ফিরে যায়। গায়ের বর্ণ পাতার মত বলে সহজেই মানুষের চোখে ধরা পড়ে না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে উড়ন্ত অবস্থায় এরা মানুষের নজরে পড়ে। তার কারণ হচ্ছে, এদের লেজ অনেক লম্বা, এমনি লম্বা যে উড়তে গেলে তা কারো-ই নজর এড়িয়ে যেতে পারে না। অত্যন্ত নিরীহ পাখি। দেখা গেছে, অন্য প্রজাতির শান্ত-নিরীহ পাখিরা পর্যন্ত এদেরকে তেড়ে যায়। যেমন ঘুঘু এদেরকে তেড়ে গেলেও এরা বিবাদ বাধায় না বরং পালিয়ে বাঁচে।
এ পাখির বাংলা নামঃ বন কোকিল, ইংরেজি নামঃ গ্রিনবিল্ড মালকোহা, (Green-billed Malkoha), বৈজ্ঞানিক নামঃ Phaenicophaeus tristis | গোত্রের নামঃ কুকুলিদি। অঞ্চলভেদে এরা সবুজ কোকিল নামেও পরিচিত।
আরও পড়ুন…
•কোকিল
•পান্না কোকিল
•পাহাড়ি কানকুয়া
•ধূসর কোকিল
•বাদামি কোকিল
বন কোকিল লম্বায় লেজসহ ৫৭-৫৯ সেন্টিমিটার। লেজটা আকারে শরীরের দেড় গুণ। গায়ের উপরের পালক ছাই-ধূসর, তার ওপর গাঢ় সবুজের আভা। লেজ পরিষ্কার সবুজ। লেজের মাঝখানে কয়েকটা সাদা টান। অগ্রভাগ সাদা। লেজের তলার দিকটা ছাই-ধূসরের ওপর সাদা টান রয়েছে। চোখের চারপাশ পালকহীন লাল চামড়ায় আবৃত। ঠোঁট সবুজ, গোড়ার দিক লালচে। পা সবুজ-স্লেট বর্ণের।
প্রধান খাবারঃ কীট-পতঙ্গ, অন্য প্রজাতির পাখির ডিম। প্রজনন সময় এপ্রিল থেকে জুলাই। ঘন পত্র-পল্লবের আড়ালে বাসা বাধে। বাসা অত সাজানো-গুছানো নয়। ডিম পাড়ে ৩-৪টি।
লেখকঃ আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামিস্ট ও বন্যপ্রাণী বিশারদ।