আমার শৈশব-কৈশোর কেটেছে রায়পুর (লক্ষ্মীপুর) উপজেলার শায়েস্তানগর গ্রামে। প্রয়াত স্কুল মাস্টার বড় মামার তত্ত্বাবধানে থেকে লেখাপড়া করতাম। মামাতো ভাই নূরুল আলম লিটন আর আমি ছিলাম অনেকটাই মানিকজোড়ের মতো। স্কুল থেকে ফিরে দুজন টই-টই করে ঘুরে বেড়াতাম গ্রামের আনাছে-কানাছে। ঘুড়ি-নাটাই, পাখির বাসা এসব করে করে দিন কাটিয়ে দিতাম। একদিন পাখির বাসা খুঁজতে গিয়ে গ্রীষ্মের পড়ন্ত বিকালে গাছের কোটরে হাত ঢুকিয়ে দিলাম। তারপর চেঁচিয়ে উঠলাম ডান হাতের তর্জনীর মাথা হারিয়ে। সেই স্মৃতি আজও বহন করছি আমি। পাখিটি ছিল টিয়া প্রজাতির। এরা সহজেই সরু তার কেটে ফেলতে পারে ওদের ধারালো ও শক্ত ঠোঁটের কামড়ে। তখন প্রজাতির নাম জানা ছিল না। ‘টিয়া’ নামেই চিনতাম।
ওরা এখন অসুলভ দর্শন হয়ে পড়েছে। অথচ ওরা দেশের আবাসিক পাখি। স্লিম গড়ন। নজরকাড়া রূপ। শাল এবং মিশ্র-চিরসবুজ বনের বাসিন্দা। এক সময় লোকালয়ে কম-বেশি দেখা যেত, হালে তেমন একটা দেখা যায় না। এরা একাকী কিংবা ছোট-বড় দলে বিচরণ করে। বিশ্বে প্রায় ১৬ লাখ ৪০ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা নিয়ে এদের আবাস হলেও বাংলাদেশে অসুলভ দর্শন হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশ ছাড়াও এদের বৈশ্বিক বিস্তৃতি ভারত, ভুটান, মিয়ানমার, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, চীন ও লাওস পর্যন্ত।
এ পাখির বাংলা নামঃ কালোমাথা টিয়া, ইংরেজি নামঃ গ্রে হেডেড প্যারাকিট, (Grey headed parakeet), বৈজ্ঞানিক নামঃ Psittacula finschii | এরা মেটেমাথা টিয়া নামেও পরিচিত।
আরো পড়ুন…
•চন্দনা টিয়া
•লটকন টিয়া
•লাল বুক টিয়া
•ফুলমাথা টিয়া
•লালমাথা টিয়া
পুরুষ পাখি লম্বায় ৩৬ সেন্টিমিটার, লেজ ২৭ সেন্টিমিটার। স্ত্রী পাখি লম্বায় লেজসহ ২২ সেন্টিমিটার। স্ত্রী-পুরুষ পাখির মধ্যে সামান্য তফাৎ লক্ষ্য করা যায়। তবে উভয় পাখির মাথা কালচে বা স্নেট কালো। মাথায় গাঢ় ধূসর অংশকে ঘিরে কালো দাগ। মাথার পেছনটায় নীলচে-সবুজ। পিঠ গাঢ় সবুজ। লেজ সবুজাভ হলুদ। মোটা লেজের পালক অর্ধেকটাই হলদেটে। দেহতল হালকা সবুজ। ঠোঁটের উপরের অংশ লাল, ডগা হলদেটে। নিচের অংশ হলদেটে। চোখের তারা হলুদ। পা কালচে। পুরুষ পাখির ডানার উপর খয়েরি-লাল বর্ণের পট্টি রয়েছে, যা স্ত্রী পাখির নেই। এ ছাড়াও পুরুষ পাখির লেজ স্ত্রী পাখির তুলনায় লম্বা।
প্রধান খাবারঃ ছোট ফল, শস্যবীজ, ফুলের মধু, গাছের কচিপাতা ইত্যাদি। প্রজনন মৌসুম মার্চ-এপ্রিল। গাছের প্রাকৃতিক কোটরে বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ৪-৫টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ২১-২২ দিন। শাবক স্বাবলম্বী হতে সময় লাগে ৪০-৪৫ দিন।
লেখকঃ আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।