কালোটুপি মাছরাঙা | Black capped Kingfisher | Halcyon pileata

338
কালোটুপি মাছরাঙা
কালোটুপি মাছরাঙা | ছবিঃ ইন্টারনেট

কালোটুপি মাছরাঙা সুললভ দর্শন পরিযায়ী পাখি হলেও স্থানভেদে অসুলভ। দেখা মেলে সুন্দরবনের নির্জনে। উপকূলীয় প্যারাবনেও কিছু দেখা যায়। হালে নাকি পাখি পর্যবেক্ষকদের কেউ কেউ ঢাকার আশপাশে দেখেছেন, সেরকম তথ্যও আমরা জানতে পেরেছি। তবে এ অঞ্চলে দেখার নজির থাকলেও আজ পর্যন্ত ঢাকার কাছাকাছি কোথাও আমার নজরে পড়েনি। আমি দেখেছি দেড় যুগ আগে সুন্দরবনের সুপতি রেঞ্জসংলগ্ন (শরণখোলা রেঞ্জের অধীন) নদীর কিনারে পানির ওপর নুয়ে থাকা গাছের ডালে। শিকারে মনোযোগী ছিল পাখিটি, ওর গতিবিধি লক্ষ্য করার সুযোগ হয়েছে খানিকটা তাই।

ওকে দেখেছি পানিতে ঝাঁপিয়ে না পড়ে নদীর কিনারের কাদামটির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়তে। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে পুনরায় একই গাছের ডালে বসে শিকার গলাধঃকরণ করতেও দেখেছি। এরা সাধারণত জোয়ার-ভাটাসিক্ত এলাকার খাঁড়ি বা মোহনায় বিচরণ করে। বিচরণ করে জোড়ায় কিংবা একাকী। অন্যসব প্রজাতির মাছরাঙাদের মতো ওড়ার সময় খুব একটা ডাকাডাকি করে না। মাঝেমধ্যে ডাকলেও ‘কিকিকিকিকি’ সুরে ডাকে। তবে প্রজনন মৌসুমে বেশি ডাকাডাকি করে। স্ত্রী পাখিকে আকৃষ্ট করতে এ প্রয়াস। প্রজাতিটির বিস্তৃতি রয়েছে বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার, চীন, লাওস, কোরিয়া, ফিলিপাইন ও ইন্দোনেশিয়ায়। প্রজাতিটি বিশ্বে বিপদমুক্ত, বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে সংরক্ষিত।

এ পাখির বাংলা নামঃ কালো-টুপি মাছরাঙা, ইংরেজি নামঃ ব্ল্যাক-ক্যাপড কিংফিশার, (Black-capped Kingfisher), বৈজ্ঞানিক নামঃ হালসিয়ন পাইলিয়েটা (Halcyon pileata), গোত্রের নাম: ‘হালসিওনিদি’। এরা ‘মাথা কালো মাছরাঙা’ নামেও পরিচিত।

আরো পড়ুন…
•বাদামি মাছরাঙা •মেঘহও মাছরাঙা •ঝুঁটিয়াল মাছরাঙা
•ব্লাইথের ছোট মাছরাঙা •ধলাগলা মাছরাঙা •নীলকান মাছরাঙা
•লাল মাছরাঙা •ছোট মাছরাঙা •পাকড়া মাছরাঙা

দেশে প্রায় ১২ প্রজাতির মাছরাঙা নজরে পড়ে। প্রজাতি লম্বায় ২৮ থেকে ৩০ সেন্টিমিটার। কপাল, মাথা ও ঘাড়ের উপরাংশ কুচকুচে কালো। গলাবন্ধ সাদা। পিঠ থেকে লেজের ডগা পর্যন্ত নীলাভ-বেগুনি। ডানার ওপর রয়েছে কালো পট্টি। গলা থেকে বুক পর্যন্ত সাদা। বুকের নিচ থেকে লেজের তলা পর্যন্ত ফিকে লালচে হলুদ। ঠোঁট প্রবাল লাল। পা ও পায়ের আঙুল কালচে লাল। স্ত্রী-পুরুষ পাখি দেখতে একই রকম। অপ্রাপ্তবয়স্কদের রং ভিন্ন। এদের গলাবন্ধ ও বুক কালচে।

প্রধান খাবারঃ মাছ, কাঁকড়া, ব্যাঙ ও টিকটিকি। প্রজনন মৌসুম মে থেকে জুলাই। বাসা বাঁধে বনভূমির কাছাকাছি নদীর খাড়া পাড়ে সুড়ঙ্গ বানিয়ে। ডিম পাড়ে ৪-৫টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৬ থেকে ১৮ দিন।

লেখকঃ আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।