সাদা মুকুট পেঙ্গা ঝগড়া-ফ্যাসাদ বাধাতে ওস্তাদ হলেও আসলে ওরা ভিতুর ডিম। দেখতে বেশ সুন্দর। গলা মোটেও সুরেলা নয়, তবে তাই দিয়েই চলে গানের রেওয়াজ। কেউ তা শুনুক বা না শুনুক তাতে তাদের কিছু আসে যায় না। সমতল থেকে খানিকটা উঁচুতে চিরসবুজ পাহাড়ি অরণ্যে এর বিচরণ। ঝোপঝাড়, বিশেষ করে বাঁশবাগান এদের খুব পছন্দের জায়গা। ফাঁকা মাঠঘাটে চড়তে ভালোবাসে না। বাস করে দলবদ্ধভাবে।
দলে কমপক্ষে ২০-২৫টি করে পাখি থাকে। মানুষকে এরা ভীষণ ভয় পায়। তাই লোকালয় থেকে দূরে থাকাই নিরাপদবোধ করে। মানুষের আনাগোনা টের পেলে সঙ্গে সঙ্গে কোথাও লুকিয়ে পড়ে। পুরুষরা বহুগামী। নিজ সঙ্গিনী ছাড়াও অন্য স্ত্রী পাখির আদর-যত্ন পেতে বেশ উত্সাহ দেখা যায় এদের। প্রায়ই দেখা যায় একাধিক স্ত্রী পাখি একটা পুরুষ পাখিকে ঘিরে আছে এবং শরীর চুলকে দিচ্ছে। পুরুষ পাখিগুলো সে আদরটুকু উপভোগ করতে ছাড়ে না। আমাদের দেশের পার্বত্য অঞ্চলেও এদের সাক্ষাত্ মেলে। বাংলাদেশ ছাড়া এশিয়ার আরো কিছু দেশে এদের দেখা যায়।
পাখিটার বাংলা নামঃ সাদা মুকুট পেঙ্গা, ইংরেজি নামঃ হোয়াইট ক্রেস্টেড লাফিং থ্রাস, (White-crested Laughingthrush), বৈজ্ঞানিক নামঃ Garrulax Leucolophus, গোত্রঃ সিলভিআইদি। কেউ কেউ একে বলে সাদা ঝুটি-কুজন পাখি।
আরো পড়ুন…
•বড় পেঙ্গা
•হলদেগলা পেঙ্গা
•লালঘাড় পেঙ্গা
এরা লেজসহ লম্বায় ৩০ সেন্টিমিটার। মাথায় ধবধবে সাদা ঝুটি। মাথা, বুকের কাছের পালকও ধবধবে সাদা। গলা ধূসর-সাদা। মোটা কালো টান কান থেকে চোখ হয়ে ঠোঁট পর্যন্ত পৌঁছেছে। শরীরের উপরের পালক গাঢ় বাদামি। ডানার প্রান্তভাগ জলপাই বাদামি। বুকের তলা লালচে পালকে আবৃত। পুচ্ছটা একটু বেশি লম্বা, বর্ণ গাঢ় জলপাইব বাদামি। ঠোঁট কুচকুচে কালো। পা, আঙ্গুল, নখও কালো।
প্রধান খাবারঃ কীটপতঙ্গ। ছোট ফলের দিকেও লোভ আছে। প্রজনন সময় মার্চ থেকে আগস্ট। বাসা বাঁধে বিচরণ ভূমি থেকে দেড়-দুই মিটার উচ্চতায় ঝোপের ভেতর। ডিম পাড়ে ৩-৫টি। ডিম ফোটতে সময় লাগে ১৫-১৭ দিন।
লেখকঃ আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামিস্ট ও বন্যপ্রাণী বিশারদ।