খুন্তে বক | Eurasian spoonbill | Platalea leucorodia

896
খুন্তে বক
খুন্তে বক | ছবি: ইন্টারনেট

খুন্তে বক দেড় যুগ আগেও এদের বিচরণ ছিল পদ্মা, মেঘনা, যমুনার চরে। বর্তমানে এদের যত্রতত্র দেখা যায় না। তবে শীত মৌসুমে মেঘনার মোহনায় চোখে পড়ে। তবে সংখ্যায় নগণ্য। এরা দক্ষিণ এশিয়ার স্থায়ী বাসিন্দা হলেও শীতে বিভিন্ন দেশে পরিযায়ী হয়ে আসে। এদেশে এসে এরা ডিম বাচ্চা ফুটায় না। তবে সুন্দরবনের পশ্চিমবঙ্গের অংশে, আসামের কাজীরাঙ্গা এবং রাজস্থানের ভতরপুরে বাসা বাঁধে। অদ্ভুত ঠোঁটের গড়ন, শরীরের অবয়ব সাদা বকের মতো হলেও আকারে খানিকটা বড়। চলাফেরা কিংবা ওড়ার ধরনও বকের মতো। পা পেছনে দিয়ে টান টান করে উড়ে। লম্বা ঠোঁটটা লুকিয়ে ফেললে দূর থেকে বকই মনে হয়।

এই পাখির বাংলা নামঃ খুন্তে বক | ইংরেজি নামঃ  ইউরেশিয়ান স্পুনবিল (Eurasian spoonbill) | বৈজ্ঞানিক নামঃ Platalea leucorodia| এরা কোদালি বক ‘চামুচ বক’ নামেও পরিচিত।

আরও পড়ুন…
•গো বক •সবুজ বক •বেগুনি বক •রঙিলা বক •হলদে বক •ধূসর বক
•কালিবক •দেশি কানিবক •ছোট ধলা বক •নলঘোঙ্গা •নিশিবক

বাংলাদেশের কোথাও বাসা বাঁধার খবর পাওয়া যায় না। এরা সামাজিক পাখি। কারও সঙ্গে ঝগড়া-ফ্যাসাদে লিপ্ত হয় না। অন্য প্রজাতির জলচর পাখিদের সঙ্গে অনায়াসে মিলেমিশে শিকার খোঁজে। আবার নিজ প্রজাতির সঙ্গে ছোট অথবা বড় দলেও বিচরণ করে। শিকারে বের হয় একেবারেই ভোরের দিকে এবং গোধূলিলগ্নে। অনেক সময় রাতেও শিকারের সন্ধানে বের হয়। শিকার খোঁজে কাদাজলে দাঁড়িয়ে।

প্রজাতির গড় দৈর্ঘ্য গলাসহ লম্বায় ৮৬-৯০ সেন্টিমিটার। গলা পালকহীন। এদের লম্বা ঠোঁটের অগ্রভাগ খুন্তের মতো চ্যাপ্টা। অপরদিকে ঠোঁটের বর্ণ কালচে হলেও ডগা হলুদ। সমস্ত শরীরের পালক ধবধবে সাদা। প্রজনন মৌসুমে বুকে সোনালি দাগ দেখা যায়। পা, আঙ্গুল কালো। স্ত্রী-পুরুষ পাখি দেখতে একই রকম।

প্রধান খাবারঃ ১০-১৫ সেন্টিমিটার সাইজের ছোট মাছ, জলজ কীটপতঙ্গ, ছোট শামুক, কাঁকড়া ইত্যাদি। প্রজনন সময় জুলাই থেকে অক্টোবর। দ্বীপ বা জলাশয়ের কাছাকাছি ২০ ফুটের অধিক উচ্চতার গাছের চূড়ায় চিকন ডালপালা দিয়ে পাটাতনের মতো বাসা বাঁধে। একই গাছে অনেকেই একত্রে বাসা বাঁধে। কলোনি টাইপ বাসা। ডিম পাড়ে ৩-৪টি। ডিমের বর্ণ সাদার ওপর বাদামী ছিট। ফুটতে সময় লাগে ২১-২৩ দিন।

লেখকঃ আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামিস্ট ও বন্যপ্রাণী বিশারদ।