কানঠুঁটি | Greater flamingo | Phoenicopterus ruber

629
Greater flamingo
কানঠুঁটি | ছবিঃ ইন্টারনেট

কানঠুঁটি সারস আকৃতির পাখি। কয়েক দশক ধরে এ দেশে এদের নজরে পড়ছে না কারও। জানা যায়, ১৯৭০ সালের দিকে সর্বশেষ ভোলা জেলার মনপুরা দ্বীপে দেখা গেছে। তারও আগে সুন্দরবন অঞ্চলে এদের দেখা যাওয়ার নজির রয়েছে। ১৯৬০ সালের দিকে এ অঞ্চলে সন্তোষজনক বিচরণ ছিল। হালে পাখি দেখিয়েদের নজরে যদিও পড়ে সেটি হবে পান্থ পরিযায়ী প্রজাতির। বর্তমানে এদের ব্যাপক বিচরণ ক্ষেত্র আফ্রিকা, দক্ষিণ এশিয়ার কিছু অঞ্চল, স্পেন, আলবেনিয়া, তুরস্ক, গ্রিস, সাইপ্রাস, পর্তুগাল, ইতালি ও ফ্রান্সের কিছু এলাকায়। বিশ্বে এদের বিচরণ সন্তোষজনক হলেও আমাদের দেশে পদচারণ নেই বলে ধারণা করেছেন পাখি বিশেষজ্ঞরা।

এ পাখিরা বেশির ভাগই লোনা জলাঞ্চলে বিচরণ করে। সংখ্যায় পঞ্চাশ থেকে হাজারখানেক পাখি একত্রে দেখা যায়। জলে দাঁড়িয়ে শিকার খোঁজে ভিন্ন কৌশলে। স্বাভাবিকভাবে ঠোঁট না চালিয়ে উল্টো করে জলে ডুবিয়ে কুচা চিংড়ি বা জলজ কীট শিকার করে। আবার অনেক সময় স্বল্পজলে গর্ত খুঁড়ে ফাঁদ পেতে শিকার ধরে। এরা স্থূল দেহের হলেও উড়তে পারে দ্রুতই। আকাশে দলবদ্ধভাবে ‘ভি’ আকারে ওড়ে। সামনে লম্বা গলা বাড়িয়ে পা দুটো টান টান করে আকাশে সাঁতার কাটে। উড়তে উড়তে কর্কশ কণ্ঠে ডাকে ‘ক্রেক… ক্রেক… ক্রেক…’। অদ্ভুত গড়নের এ প্রজাতির পাখিদের সঙ্গে আমার আজও মুক্তাঞ্চলে সাক্ষাৎ ঘটেনি, সাক্ষাৎ ঘটেছে ঢাকা চিড়িয়াখানায়। যত দূর জানি পাখিগুলো আজ পর্যন্ত চিড়িয়াখানায় সংরক্ষিত আছে। পাখি দেখিয়েদের জন্য এটি একটি সুসংবাদ বলা যায়।

প্রজাতির বাংলা নামঃ কানঠুঁটি, ইংরেজি নামঃ গ্রেটার ফ্লেমিঙ্গো, (Greater flamingo), বৈজ্ঞানিক নামঃ Phoenicopterus ruber | এরা কানমুঁথি নামেও পরিচিত।

এরা লম্বায় ১৪৫ সেন্টিমিটার। ওজন চার-সাড়ে চার কেজি। পুরো দেহ সাদা-গোলাপি আভার মিশ্রণ। ওড়ার পালক সিঁদুরে লাল, ডানার বাকি অংশ কালো। গলা ও পা অস্বাভাবিক লম্বা। পা গোলাপি লাল। পায়ের পাতা হাঁসের পায়ের মতো জোড়া লাগানো। বাঁকানো ঠোঁটের ডগা কুচকুচে কালো, বাকি অংশ গোলাপি। স্ত্রী-পুরুষ পাখি দেখতে একই রকম।

প্রধান খাবারঃ কুচা চিংড়ি-জাতীয় সামুদ্রিক প্রাণী, ছোট শামুক, গুগলি, জলজ পোকামাকড়। প্রজনন মৌসুম এপ্রিল থেকে মে। কাদামাটি দিয়ে প্রায় ৩০ সেন্টিমিটার উঁচু ঢিবির মতো বাসা বানায়। সূর্যের আলোতে কাদা শুকিয়ে শক্ত হলে বাসার ভেতর ঢুকে ডিম পাড়ে। ডিমের সংখ্যা ১-২টি। ডিম ফুটতে লাগে ২৭-৩১ দিন। শাবক প্রাপ্তবয়সী হতে লাগে ২-৩ বছর।

লেখকঃ আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।