লটকন টিয়া | Vernal hanging parrot | Loriculus vernalis

433
লটকন টিয়া
লটকন টিয়া | ছবিঃ তৌহিদ পারভেজ বিপ্লব

মাধবকুণ্ড পৌঁছাতে তখনো প্রায় দুই-আড়াই কিলোমিটার পথ বাকি। ঠিক এ মুহূর্তেই গাড়ির চাকা পাংচার হয়ে গেল। গাড়ি থেকে নেমে তাই জলপ্রপাতের উদ্দেশে হাঁটতে লাগলাম। কিছু দূর যেতেই এক সঙ্গী হাতের তর্জনী উঁচিয়ে রাস্তার পাশের জঙ্গলের দিকে ইঙ্গিত করলেন। দৃষ্টি নিক্ষেপ করতেই দেখতে পেলাম দুটি বুনো খরগোশ খাবার খাচ্ছে। এগিয়ে গেলাম ছবি তুলতে আর তখনই ওরা লাফিয়ে জঙ্গলের ভেতরে অদৃশ্য হয়ে গেল। ওদের পিছু নিতে গিয়ে থমকে দাঁড়ালাম, ‘চি-ট-ট, চি-ট-ট’ সুর কানে যেতেই। সুরটা গাছের উপরের মগডাল থেকে আসছে। পরিচিত সুর। সঙ্গে সঙ্গে ব্যাগ থেকে বাইনোকুলার বের করে আইপিচে চোখ রাখলাম।

হ্যাঁ, দেখতে পেলাম ৭-৮টি পাখি বুনো ফল ঠোকরে খাচ্ছে আর মৃদু স্বরে আওয়াজ করছে। তন্ময় হয়ে তাকিয়ে রইলাম ওদের দিকে। দেখতে ভীষণ সুন্দর। স্থানীয় প্রজাতির পাখি হলেও এরা এখন সুলভ থেকে অসুলভ হয়ে পড়েছে। দেশে খুব একটা নজরে পড়ে না আজকাল। শিকারিদের খপ্পরে পড়ে বন্দীদশায় কাটাতে হচ্ছে এদের। মিশ্র চিরহরিৎ বনের বাসিন্দা এরা। চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও সিলেটের সমতল এবং পাহাড়ের পাদদেশের গাছগাছালিতে দেখা যায়। দেখা যায় চা-বাগানাঞ্চলেও। রাতে গাছের মগডালে বাদুরের মতো ঝুলে ঘুমায়। ওদের নামকরণের পেছনে স্বভাবটি যোগ হয়েছে তাই।

পাখির বাংলা নামঃ লটকন টিয়া, ইংরেজি নামঃ ভারনাল হ্যাংগিং প্যারেট, (Vernal hanging parrot), বৈজ্ঞানিক নামঃ লরিক্যুলাস ভারনালিস,(Loriculus vernalis)। গোত্রের নামঃ সিট্টিসিদি (Psittaculidae) | এরা ঝুলন টিয়া নামেও পরিচিত।
লটকন টিয়া
লটকন টিয়া | ছবিঃ তৌহিদ পারভেজ বিপ্লব

দেশে প্রায় সাত প্রজাতির টিয়া দেখা যায়। লম্বায় ১৩-১৪ সেন্টিমিটার (লেজ ৪ সেন্টিমিটার)। ঠোঁট টকটকে লাল। গলায় ফিরোজা রঙের ছোপ। দেহের উপরাংশ ঘাস-সবুজ। পিঠের শেষাংশ থেকে লেজের ওপর পর্যন্ত উজ্জ্বল লাল। দেহের নিচের পালক হলদেটে সবুজ। স্ত্রী-পুরুষ পাখি দেখতে একই রকম মনে হলেও সামান্য পার্থক্য রয়েছে। স্ত্রী পাখির গলায় ফিরোজা রঙের উপস্থিতি নেই।

আরও পড়ুন…
•চন্দনা টিয়া •কালোমাথা টিয়া •লাল বুক টিয়া
•ফুলমাথা টিয়া •লালমাথা টিয়া •সবুজ টিয়া

প্রধান খাবারঃ ছোট নরম ফল, ফুলের মধু। এ ছাড়াও তালের রসের প্রতি আসক্তি লক্ষ্য করা যায়। প্রচুর তালের রস পান করে অনেক সময় নেশাগ্রস্ত হয়ে চুপসে থাকে। প্রজনন সময় জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারি। গাছের প্রাকৃতিক কোটরে নরম লতাপাতা দিয়ে বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ৩-৪টি। ডিম ফুটতে লাগে ১৮-২০ দিন।

লেখকঃ আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামিস্ট ও বন্যপ্রাণী বিশারদ।