পাখির বংলা নাম: কেশরাজ । মূলত এরা মাঠের পাখি। মাঠ-প্রান্তরে উড়ে উড়ে পোকামাকড় শিকার করে। পানি খাওয়ার কায়দাটা উপভোগ করার মতো। বেশ অদ্ভুতও বলা যায়। পানির ওপর উড়ে এসে ছোঁ মেরে পানি পান করে। এদের প্রথম দর্শনে ফিঙে মনে হতে পারে। কিন্তু তা নয়। তবে ফিঙে গোত্রেরই এরা। স্বভাবেও ফিঙেদের মতো উগ্র ও হিংস্র। শিকারি পাখিদেরও তোয়াক্কা করে না; তেড়ে যায়। ঠোকর বসিয়ে দেয় মাথায়, পিঠে।
বিশেষ করে বাজ, চিল ওদের প্রধান শত্রু। শত্রু পাখি দেখলেই ৩০ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে ছোঁ মেরে ঠুকরে দেয়। অনেক সময় মানুষকেও রেহাই দেয় না। বাসার কাছাকাছি গেলেই আক্রমণ করে। গাঁয়ের দুষ্ট ছেলেরা পর্যন্ত এদের বাসার ধারেকাছেও ভেড়ে না। পশুরা এদের প্রিয় বন্ধু। গরু, ছাগল, মহিষ-জাতীয় প্রাণীর সঙ্গে খাতির বেশি। ওদের পিঠে চড়তে ভীষণ ভালোবাসে। শুধু পিঠেই চড়ে না, পশুদের শরীরের পোকামাকড় ঠুকরে খায়। আরাম পেয়ে তাই পশুরাও চুপচাপ থাকে, বিরক্ত করে না। নিরীহ গোত্রের পাখিরা এদের বন্ধু। তেড়ে যায় না। বরং আশ্রয় দেয়। এদের বাসার কাছাকাছি নিরীহ পাখিরা বাসা বাঁধে নিরাপদে থাকার জন্য। প্রজাতির বৈশ্বিক বিস্তৃতি বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, ভুটান, ইন্দোচীন, ইন্দোনেশিয়া ও ব্রুনাই পর্যন্ত।
এ পাখির ইংরেজি নামঃ Hair cerested Drongo | বৈজ্ঞানিক নামঃ Dicrurus Hottentottus |
গড় দৈর্ঘ্য ৩২-৩৩ সেন্টিমিটার। গায়ের পালক নীলচে কালো। ঠোঁট, পা স্বাভাবিক কালো। লেজের গড়ন ভিন্ন। এখানেই ফিঙের সঙ্গে পার্থক্য। ফিঙের লেজটা মাছের লেজের মতো আর কেশরাজের লেজ তিমি বা ডলফিনের লেজের মতো ভিতরে মোড়ানো থাকে। মাথায় ক’গাছি কালো কেশাকৃতির ৬ সেন্টিমিটার লম্বা পালক। শরীরের পালকের তুলনায় এ পালক কিছুটা শক্ত। স্ত্রী-পুরুষ পাখির চেহারা অভিন্ন।
প্রধান খাবারঃ পোকামাকড়। ফুলের মধুও খেতে দেখা যায়। খেজুরের রস এদের প্রিয়। প্রজনন মৌসুম মার্চ থেকে জুন। বাসা দেখতে চায়ের পিরিচের মতো। বাসা তৈরির উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে গাছের ছাল-বাকল, শুকনো লতা-পাতা ইত্যাদি। ডিমের সংখ্যা ৩-৪টি। ফোটাতে নেয় ১৫ থেকে ১৭ দিন।
লেখকঃ আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।