স্থানীয় প্রজাতির বনচর পাখি। গড়ন ত্রিভুজাকৃতির। আকর্ষণীয় চেহারা। শরীরের তুলনায় লেজের দৈর্ঘ্য বেমানানই বটে। হঠাৎ দেখলে মনে হতে পারে কেউ লেজটা কেটে দিয়েছে। চিরসবুজ অরণ্যের বাসিন্দা। দেশে বলতে গেলে একমাত্র সুন্দরবনেই দেখা মেলে। সাধারণত একাকী বিচরণ করে। তবে মাঝেমধ্যে জোড়ায়ও দেখা যায়। স্বভাবে ভারি চঞ্চল। ওড়ার চেয়ে লাফায় বেশি। খুব ভোরে এবং গোধূলিলগ্নে কর্মচঞ্চল হয়ে ওঠে। রাতেও খাবার খোঁজে। অথচ রাতে খুব বেশি চোখে দেখে না। এ অবস্থায় শত্রুর মুখোমুখি হলে আন্দাজে ডানা ঝাপটে কেটে পড়ে। বিষণ্ন কণ্ঠে ঠোঁট উঁচিয়ে ডাকাডাকি করে। সুর সুমধুর। বৈশ্বিক বিস্তৃতি বাংলাদেশ ছাড়া ভারত, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়া পর্যন্ত।
পাখির বাংলা নামঃ ‘প্যারা শুমচা’, ইংরেজি নামঃ ম্যানগ্রোভ পিট্টা (Mangrove Pitta), বৈজ্ঞানিক নামঃ Pitta megarhyncha | কারো কারো কাছে ‘সুন্দরবনের শুমচা’ নামেও পরিচিত। দেশে মোট পাঁচ প্রজাতির শুমচা পাখির দেখা মেলে। যথাক্রমে: প্যারা শুমচা, দেশি শুমচা, নীলঘাড় শুমচা, নীল শুমচা (পরিযায়ী) ও খয়রামাথা শুমচা (পরিযায়ী)।
আরো পড়ুন…
•নীল শুমচা
•নীলঘাড় শুমচা
•নওরঙ
দৈর্ঘ্যে পাখিটি কমবেশি ১৮ থেকে ২১ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। ওজন ৯২ থেকে ১২০ গ্রাম। স্ত্রী ও পুরুষ পাখির চেহারা অভিন্ন। মাথা ধূসর বাদামি। ঠোঁটের গোড়ার দুই পাশ থেকে কালো প্রশস্ত রেখা ঘাড়ের ওপর গিয়ে ঠেকেছে। গলার নিচ থেকে প্রশস্ত ক্রিম-সাদা রেখা ঘাড়ের কালো রেখার নিচে সরু হয়ে মিলেছে। পিঠ থেকে লেজের গোড়া পর্যন্ত জলপাই-সবুজাভ। ডানায় নীল ছোপ। খাটো লেজ, রং কালো। দু-একটি পালকের ডগা আসমানি। দেহতল শিয়াল রঙের। তলপেট থেকে লেজের নিচ পর্যন্ত টকটকে লাল। চোখ কালো। ঠোঁট মোটা, ত্রিভুজাকৃতির। রং শিঙ কালো। পা দুটি লিকলিকে লম্বা।
প্রধান খাবারঃ ভূমিজ কীটপতঙ্গ, কেঁচো। লতাগুল্মাদির ভেতর নরম মাটিতে ঠোঁট ঠুকরে খাবার খোঁজে এবং ঝরাপাতা উল্টিয়ে পোকামাকড় খায়। প্যারা শুমচার প্রজনন মৌসুম এপ্রিল থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত। বাসা বাঁধে মাটিতে অথবা ফার্নে আবৃত গাছের কাণ্ডে। বাসা গোলাকার। উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে চিকন লাঠি, শুকনো শেকড়, শুকনো ঘাস বা লতাপাতা। দুই থেকে তিনটি ডিম পাড়ে। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৪ থেকে ১৬ দিন। শাবক উড়তে শেখে ২০ থেকে ২৫ দিনের মধ্যে।
লেখকঃ আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।