জলপাই হলুদ মৌটুসি | Olive backed Sunbird | Cinnyris jugularis

258
জলপাই হলুদ মৌটুসি
জলপাই হলুদ মৌটুসি | ছবি: ইন্টারনেট

জলপাই হলুদ মৌটুসি পুরুষ পাখির আকর্ষণীয় রুপ বারবার দেখতে ইচ্ছে করে। সে তুলনায় স্ত্রী পাখি খানিকটা নিস্প্রভ। অনেক সময় ভিন্ন গোত্র্রের মনে হতে পারে। উভয়ের ঠোঁট দেহের তুলনায় লম্বা। কাস্তের মত বাঁকানো তীক্ষ্ম ঠোঁটজোরা ফুলের মধুপানে সহায়ক। উরন্ত অবস্থায় ফুলের পাপড়ির ভেতর ঠোঁট ঢুকিয়ে মধুপান করে। কণ্ঠস্বর সুমধুর। স্বভাবে ভারি চঞ্চল। স্থিরতা নেই বললেই চলে। মধু এদের প্রিয় খাবার। সারাদিন মধুর সনাধানে ঘুরে বেড়ায়।

বেশির ভাগ সময় একাকী বিচরণ করলেও প্রজনন মৌসুমে জোড়ায় জোড়ায় দেখা যায়। প্রাকৃতিক আবাসস্থল নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলের বন অথবা গ্রামীণ বনবাদাড়। বৈশ্বিক বিস্তৃতি বাংলাদেশ ব্যতিত দক্ষিন এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চল।এ ছাড়াও ভিয়েতনাম, দক্ষিন চীন, উত্তর নিউগিনিতে দেখা মিলে। আমাদের দেশে প্রায় ৯ প্রজাতির মৌটুসির স্বাক্ষাত মিলে। এদের প্রতিটি প্রজাতির স্বভাব কিংবা আচার-আচারণ একই রকম। চেহারাও প্রায় একই ধাঁচের। পাখি বিশারদ ব্যতিত সাধারণ মানুষের পক্ষে জাতপাত নির্নয় করা বড়ই কঠিন।

পাখির বাংলা নামঃ জলপাই-হলুদ মৌটুসি | ইংরেজী নামঃ অলিভ-ব্যাকেড সানবার্ড, (Olive-backed Sunbird)| বৈজ্ঞানিক নামঃ Cinnyris jugularis| এরা ‘জলপাইপিঠ মৌটুসি’ নামেও পরিচিত।

আরো পড়ুন…
•সিঁদুরে মৌটুসি •লাললেজ মৌটুসি •বেগুনি গলা মৌটুসি
•সবুজ লেজি মৌটুসি •বেগুনি কোমর মৌটুসি •সিঁদুরে হলুদ মৌটুসি
•ছোট মাকড়সাভুক মৌটুসি •চুনিমুখী মৌটুসি

গড় দৈর্ঘ ১২ সেন্টিমিটার। স্ত্রী-পুরুষ পাখির চেহারা ভিন্ন। প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষ পাখির কপাল, গলা ও বুকের উপরিভাগ ধাতব-নীল কালো। ঘাড় ও পিঠ জলপাই। ওড়ার পালক হলুদ-সাদা। বুকের মাঝামাঝি থেকে লেজতল পর্যন্ত উজ্জল হলুদ। চোখ বাদামি কালো; চোখের ওপর নিচে ভ্রু আকৃতির হলুদ টান। ঠোঁট শিং কালো; কাস্তের মতো বাঁকানো। পা ধূসর-কালো অপরদিকে স্ত্রী পাখির কপাল, ঘাড় ও পিঠ ময়লা জলপাই রঙের। গলা থেকে লেজতল পর্যন্ত ময়লা হলুদ। চোখের ওপর আবছা ময়লা সাদা টান। বাদবাকি পুরুষ পাখিদের মতো। যুবাদের রঙ ভিন্ন।

প্রধান খাবারঃ ফুলের মধু। ছোট পোকামাকড়, মাকড়সা ইত্যাদি খেতে দেখা যায়। প্রজনন মৌসুম এপ্রিল থেকে আগষ্ট। অঞ্চলভেদে প্রজনন মৌসুমের হেরফের রয়েছে। ভূমি থেকে দুই-তিন মিটারের মধ্যে বাসা বাঁধে। নাশপাতি আকৃতির; দেখতে কিছুটা বাবুই পাখির বাসার মতো। বাসা বানাতে উপকরণ হিসাবে ব্যবহার করে গাছের তন্তু, শ্যাওলা, মাকড়াসার জাল, তুলা ইত্যাদি। ডিম পাড়ে ১-২টি। ফুটতে সময় লাগে সপ্তাহ দুয়েক।

লেখকঃ আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণীবিশারদ ও পরিবেশবিদ।