বাংলা ঝাড়ভরত, বালি ভরত প্রজাতি দুটি একই রকম। অনেকটা চড়–ই পাখির মতো দেখতে। নবীন পাখি দেখিয়েদের পক্ষে প্রজাতি শনাক্ত করা দুরূহ বটে। পাঠক বিভ্রান্তিতে পড়তে পারেন বিধায় শুরুতে সে তথ্য দিয়ে রাখলাম। প্রজাতি দুটি দেখতে একই রকম মনে হলেও আকারে এবং স্বভাবে এরা কিছুটা ভিন্ন। মূলত এরা শুষ্ক বেলে মাটিতে বিচরণ করে।
বিশেষ করে নদ-নদীর তটে বা দ্বীপাঞ্চলের বেলাভূমিতে বেশি দেখা যায়। নিয়মিত গোসালাদি করে। ধুলোস্নান বেশি পছন্দ। ফসল কাটা হয়েছে এমন ক্ষেতেও ঘুরে ঘুরে খাবার সংগ্রহ করতে দেখা যায়। শরীর দুলিয়ে গান গাইতে গাইতে খাবারাদি খোঁজে। প্রজনন মৌসুমে পুরুষ পাখি বেশি বেশি গান গায়। প্রজাতিটি দেশের স্থায়ী বাসিন্দা। বৈশ্বিক বিস্তৃতি বাংলাদেশ ছাড়া ভারত, নেপাল, পাকিস্তান, ভুটান, মিয়ানমার ও ইরান পর্যন্ত। বিশ্বব্যাপী হুমকি না হলেও অঞ্চল ভেদে উদ্বেগ প্রজাতি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
পাখির বাংলা নামঃ বালি ভরত, ইংরেজি নামঃ স্যান্ড লার্ক (Sand Lark), বৈজ্ঞানিক নামঃ Calandrella raytal | এরা ‘ডোরা-বুক ধুল চড়–ই’ নামেও পরিচিত। দেশে সাত প্রজাতির ভরত দেখা যায়। তম্নধ্যে দুই প্রজাতি পরিযায়ী।
আরও পড়ুন…
•সুরেলা ঝাড়ভরত
•বাংলা ঝাড়ভরত
প্রজাতিটি দৈর্ঘ্যে ১২-১৩ সেন্টিমিটার। স্ত্রী-পুরুষ পাখি দেখতে প্রায় একই রকম হলেও সামান্য পার্থক্য রয়েছে। মাথা, ঘাড়, পিঠ ও লেজ হলুদাভ পাটকিলের ওপর কালচে চওড়া বুটিক। লেজ খাটো। বুক, পেট ও লেজতল হলুদাভ ধূসর। ঠোঁট হালকা হলুদের সঙ্গে পোড়ামাটির আভা। চোখ বাদামি। পা ও পায়ের আঙ্গুল গোলাপি লাল।
প্রধান খাবারঃ অমেরুদণ্ডী প্রাণী, ছোট পোকামাকড়, ঘাস বিচি, কচিঘাসের ডগা ইত্যাদি। প্রজনন মৌসুম মার্চ থেকে এপ্রিল। অঞ্চলভেদে প্রজনন মৌসুমের হেরফের রয়েছে। বাসা বাঁধে ঘাসবনে অথবা নলবনে। বাসা বানাতে উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে শুকনো ঘাস-লতা, শুকনো ধানপাতা, খড়কুটো ইত্যাদি। ডিম পাড়ে ২-৩টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১০-১৩ দিন। শাবক উড়তে শেখে সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যেই।
লেখকঃ আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামিস্ট ও বন্যপ্রাণী বিশারদ।