সাদাভ্রু দামা মূলত পরিযায়ী পাখি। তৈগা ও সাইবেরিয়া অঞ্চলের সরলবর্গীয় বনে বিচরণ করে। শীতে বাংলাদেশ, ভারত, ভুটান, মিয়ানমার, তাইওয়ান, উত্তর চীন, ফিলিপাইন ও ইন্দোনেশিয়াতে পরিযায়ী হয়ে আসে। এ ছাড়াও বৈশ্বিক বিস্তৃতি বেরিং সাগরের দ্বীপ, উত্তর আমেরিকার আলাস্কা, ক্যালিফোর্নিয়া এবং ইউরোপের কিছু অংশ পর্যন্ত। এরা ভূচর পাখি। গানের গলা ভালো। মিষ্টি সুরে গান গায়। গাছের উঁচু ডালে বসে খুব ভোরে এবং গোধূলিলগ্নে গান গায়। স্বভাবে লাজুক।
বেশিরভাগই একাকি বিচরণ করলেও শীতে ছোট ঝাঁকে দেখা যায়। প্রজনন মৌসুমে দেখা যায় জোড়ায় জোড়ায়। এরা পরিত্যক্ত বা স্যাঁতস্যাঁতে এলাকার লতাপাতা উল্টিয়ে এবং ঘন ঘন ঠোঁট চালিয়ে খাবার খোঁজে। মন ভালো থাকলে মাঝে মাঝে পেটের পালক ফুলিয়ে উল্লাস করে। গাছের উঁচুতে খুব একটা দেখা যায় না। দেশের সর্বত্র দেখা যাওয়ার নজির নেই। আইইউসিএন প্রজাতিটিকে ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
প্রজাতিটির বাংলা নামঃ সাদা-ভ্রু দামা, ইংরেজি নামঃ আইব্রোড থ্রাস (Eyebrowed Thrush), বৈজ্ঞানিক নামঃ Turdus obscurus | এরা ‘ভ্রুলেখা দামা’ নামেও পরিচিত।
আরও পড়ুন…
•কমলাদামা
•নীল শিলাদামা
•কালচে দামা
•লালগলা দামা
•ধূসর দামা
•ধূসর ডানা কালো দামা
•লম্বাঠোঁটি দামা
•কালোবুক দামা
•সাদাঘাড় কালো দামা
এরা দৈর্ঘ্যে ২১-২৩ সেন্টিমিটার লম্বা। ওজন ৬১-১১১ গ্রাম। স্ত্রী-পুরুষ পাখির চেহারা অভিন্ন হলেও সামান্য পার্থক্য রয়েছে। পুরুষ পাখির মাথা, ঘাড় ও পিঠ বাদামি-ধূসর। চিবুক কালচে বাদামি। চোখের ওপর চওড়া সাদা ভ্রু। চোখের নিচের দিকে এবং গালেও সাদা দাগ রয়েছে। গলা সাদা। বুক এবং বুকের দু’পাশ কমলা। পেট থেকে লেজতল সাদা। চোখের বলয় সাদাটে। উপরের ঠোঁট শিং কালো, নিচের ঠোঁটের গোড়ার দিকে হলুদ এবং অগ্রভাগ শিং কালো। পা ময়লা-হলুদ। অপরদিকে স্ত্রী পাখির চেহারা পুরুষের তুলনায় কিছুটা নিষ্প্রভ।
প্রধান খাবারঃ কেঁচো, পোকামাকড়, ছোট শামুক। এ ছাড়াও ছোট ফল-ফলাদির প্রতি আসক্তি রয়েছে। প্রজনন মৌসুম মে থেকে জুলাই। মঙ্গোলিয়া অঞ্চলে আগস্টের দিকে প্রজনন ঘটে। এ ছাড়াও অঞ্চলভেদে প্রজনন মৌসুমের হেরফের রয়েছে। বাসা বাঁধে ভূমি থেকে ৪-২০ ফুট উঁচুতে। কাপ আকৃতির বাসা। উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে শৈবাল, শুকনো ঘাস ও লতাপাতা। ডিম পাড়ে ৪-৬টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে সপ্তাহ দুয়েক।
লেখকঃ আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামিস্ট ও বন্যপ্রাণী বিশারদ।