কালামাথা গাঙচিল পরিযায়ী পাখি। সুলভ দর্শন। মায়াবী ধাঁচের পরিপাটি চেহারা। দূর দর্শনে ‘খয়রামাথা গাঙচিল’ মনে হতে পারে। এরা শীতে পরিযায়ী হয়ে আসে দক্ষিণ রাশিয়া ও উত্তর-পূর্ব মঙ্গোলিয়া থেকে। আশ্রয় নেয় বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে। এ পাখি বিশেষ করে চরে বেড়ায় উপকূলীয় মোহনা, দ্বীপাঞ্চল, কাপ্তাই হ্রদ, নাফ নদীর মোহনা, সেন্টমার্টিন দ্বীপ এবং সুন্দরবন অঞ্চলের জেলেপাড়ায়। মূলত মরা মাছ খাওয়ার লোভেই জেলেপল্লীতে এদের যাতায়াত।
মিঠাজলের চেয়ে লবণজল অধিক প্রিয়। এ পাখিকে সাগরের কাছাকাছি এলাকায় বেশি দেখা যাওয়ার প্রধান কারণ এটিই। বিচরণ করে ঝাঁক বেঁধে, আবার একাকী কিংবা জোড়ায়ও দেখা যায়। স্বভাবে শান্ত। ঝগড়াঝাটি পছন্দ নয়। নিজেদের মধ্যে খুনসুটি বেঁধে গেলে বিরক্ত হয়ে কর্কশ কণ্ঠে ডেকে ওঠে ‘ক্রাআ-ক্রা-আ’। এ প্রজাতির পাখির উপস্থিতি আমাদের দেশে সন্তোষজনক। বাংলাদেশ ছাড়া এদের সাক্ষাৎ মেলে ভারত-পাকিস্তানেও।
এ পাখির বাংলা নামঃ কালামাথা গাঙচিল, ইংরেজি নামঃ কমন ব্ল্যাক হেডেড গাল, (Common Black-headed Gull)। বৈজ্ঞানিক নামঃ Larus ridibundus| এরা ‘গঙ্গা কবুতর’ নামেও পরিচিত।
আরো পড়ুন…
•গাঙচিল
•খয়রামাথা গাঙচিল
•সাদাডানা গাঙচিল
•ঝুঁটিওয়ালা ঠোঁটকালো গাঙচিল
•বড়ঠোঁটি গাঙচিল
•হলদেপা গাঙচিল
•কালাপেট গাঙচিল
•নদীচিল
লম্বায় ৩৫-৩৯ সেন্টিমিটার। প্রসারিত ডানা ৮৬-৯৯ সেন্টিমিটার। ওজন ২০০-৪০০ গ্রাম। গ্রীষ্মে মাথা হয় চকলেট-বাদামি। গ্রীষ্ম-পরবর্তী সময় মাথা ধীরে ধীরে কালো রং ধারণ করে। শুধু চোখের উপরে ও নিচে অর্ধচন্দ্রাকারে থাকে সাদা ছোপ। এদের সমস্ত দেহে সাদা পালক, কেবল ডানার উপরের দিক এবং পিঠ ধূসর। লেজ কালো-সাদা। ওড়ার প্রাথমিক পালকের প্রান্ত কালো। পালক সাদার ওপর কালো ফোঁটা। দেহতল সাদা। ঠোঁট মোটা বাদামি। পা ও আঙ্গুল বাদামি-লাল। স্ত্রী-পুরুষ পাখি দেখতে একই রকম। অপ্রাপ্তবয়স্কদের চেহারা ভিন্ন।
প্রধান খাবারঃ মাছ। এ ছাড়াও বালুচরে ঘুরে পোকামাকড় খেতে দেখা যায়। প্রজনন মৌসুম মধ্য এপ্রিল। বাসা বাঁধে জন্মভূমিতেই। জলাশয়ের কাছাকাছি ভূমিতে ঘাস, লতাপাতা বিছিয়ে বাসা বানায়। ডিম পাড়ে ২-৩টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ২৫-২৭ দিন। শাবক স্বাবলম্বী হতে সময় লাগে ৩৫ দিন।
লেখকঃ আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামিস্ট ও বন্যপ্রাণী বিশারদ।