ফুলমাথা টিয়া স্থানীয় প্রজাতির পাখি। অসুলভ থেকে বিরল। মাঝেমধ্যে দেখা মিলে মিশ্র চিরসবুজ বনে। বিশেষ করে সিলেট থেকে টেকনাফ পর্যন্ত যেসব বনাঞ্চল রয়েছে, ওই সব বনাঞ্চলের অপেক্ষাকৃত ফাঁকা জায়গায় অল্পস্বল্প নজরে পড়ে। ঝাঁক বেঁধে বিচরণ করে। একাকী কিংবা জোড়ায়ও দেখা যায়। দেশে খুব একটা বড় ঝাঁকে দেখা যায় না। গড়ন স্লিম। মনোহরণকারী রূপ। দেখতে অনেকটাই ‘লালমাথা টিয়া’র মতো। পুরুষ পাখির আকর্ষণীয় চেহারা। সে তুলনায় স্ত্রী পাখি কিছুটা নিষ্প্রভ।
বাংলাদেশ ছাড়াও বৈশ্বিক বিস্তৃতি ভারতের পশ্চিমবঙ্গ এবং দক্ষিণ আসাম, পাকিস্তান, উত্তর মিয়ানমার পর্যন্ত। স্বভাবে হিংস্র। প্রজনন মুহূর্তে স্ত্রী পাখির হিংস্রতা বেড়ে যায় বহুগুণ। এ সময় অন্যরা কাছে ভিড়তে পারে না। ভালো পোষ মানে। শেখালে কথাও বলতে পারে। অনেক সময় খাঁচার দরজা খুলে দিলেও পালিয়ে যায় না। ক্রীড়ামোদী পাখি। খাঁচায়বন্দী অবস্থায় নানা কসরত দেখায়। খেলা করে এটাসেটা নিয়ে। বল আকৃতির গোলাকার কিছু পেলে ঠোঁট দিয়ে ঠেলতে থাকে। বলা যায় দিনের বেশির ভাগ সময় পার করে খেলাধুলা করেই।
পাখির বাংলা নামঃ ফুলমাথা টিয়া, ইংরেজি নামঃ ব্লসম-হেডেড প্যারাকিট (Blossom headed parakeet), বৈজ্ঞানিক নামঃ Psittacula roseata | এরা ‘হীরামন’ বা ‘আসামের লালমাথা টিয়া’ নামেও পরিচিত। কেউ কেউ ‘পুষ্প কেশ টিয়া’ নামেও ডাকে।
আরো পড়ুন…
•চন্দনা টিয়া
•কালোমাথা টিয়া
•লটকন টিয়া
•লাল বুক টিয়া
•লালমাথা টিয়া
এরা দৈর্ঘ্যে কমবেশি ৩০ সেন্টিমিটার। ওজন ৭৫-৮৫ সেন্টিমিটার। স্ত্রী-পুরুষ পাখির চেহারায় পার্থক্য আছে। পুরুষ পাখির কপাল, মাথা গোলাপি, মাথার পেছনের দিক ফ্যাকাসে নীল। ঘাড়ে কালো বলয়। পিঠ হলুদাভ সবুজ। ডানা সবুজ। ডানার গোড়ায় খয়েরি-লাল পট্টি। নীলাভ-সবুজ লম্বা লেজ। তন্মধ্যে সবচেয়ে লম্বা পালকের প্রান্তরটি সাদাটে। দেহতল হলুদাভ-সবুজ। উপরের ঠোঁট ফিকে কমলা-হলুদ, নিচের ঠোঁট বাদামি। উভয়ের চোখের তারা হলুদাভ। পা সবজেটে। অন্যদিকে স্ত্রী পাখির ধূসরাভ-নীল মাথা। ঘাড়ে কালো বলয় নেই। ঘাড়ের শেষ ভাগের বন্ধনী হলুদাভ-সবুজ। ঠোঁট ভুট্টার রঙের মতো।
প্রধান খাবারঃ শস্যবীজ, ছোট ফল, ফুলের পাপড়ি। পোষা পাখি বাদাম এবং দুধ-ভাত খায়। প্রজনন মৌসুম জুলাই থেকে আগস্ট। গাছের প্রাকৃতিক কোটরে বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ৪-৫টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ২২-২৪ দিন।
লেখকঃ আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।