কালাপেট গাঙচিল আবাসিক পাখি। সুচালো স্লিম আকৃতির গড়ন। দেখতে মন্দ নয়। উপকূলীয় অঞ্চলের নদ-নদীতে এদের দেখা মিললেও মূলত এরা সামুদ্রিক পাখি। হ্রদ কিংবা নদ-নদীতে বিচরণের পাশাপাশি দেখা মেলে বালুময় দ্বীপাঞ্চলেও। এ ছাড়া কৃষিজমিতে বিচরণ রয়েছে। মিঠা জলের চেয়ে লবণ জলে বিচরণ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। সাগরের কাছাকাছি এলাকায় বেশি দেখা যাওয়ার মূল কারণই এটি। বিচরণ করে ঝাঁক বেঁধে। কলোনি টাইপ বাসা বাঁধে। চলাচলরত নৌযানকে অনুসরণ করতে দেখা যায় প্রায়ই। নৌযানের পেছন পেছন চক্কর মেরে উড়ে জলে ঝাঁপিয়ে পড়ে মাছ শিকারের উদ্দেশ্যে। স্বভাবে শান্ত। ঝগড়াঝাটি পছন্দ নয়। তবে নিজেদের মধ্যে কমবেশি ঝগড়া বাধে। এ সময় বিরক্ত হয়ে কর্কশ কণ্ঠে ডেকে ওঠে ‘ক্রাআ-ক্রা-আ’ সুরে।
শিকারি পাখি ব্যতিরেকে এদেরকে পারতপক্ষে কেউ তেমন একটা বিরক্ত করে না। ফলে এরা দেশে মোটামুটি ভালো অবস্থানে রয়েছে। বাংলাদেশ ছাড়াও বৈশ্বিক বিস্তৃতি, ভারত, নেপাল, পাকিস্তান, মিয়ানমার, চীন, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, লাওস ও কম্বোডিয়া পর্যন্ত। বিশ্বের অন্যান্য স্থানের তুলনায় বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানে এদের অবস্থান কিছুটা ভালো।
পাখির বাংলা নামঃ কালাপেট গাঙচিল, ইংরেজি নামঃ ব্ল্যাক-ব্যালিড টার্ন (Black-bellied Tern), বৈজ্ঞানিক নামঃ Sterna acuticauda | এরা ‘কালাপেট পানচিল’ নামেও পরিচিত।
আরো পড়ুন…
•গাঙচিল
•খয়রামাথা গাঙচিল
•সাদাডানা গাঙচিল
•ঝুঁটিওয়ালা ঠোঁটকালো গাঙচিল
•কালামাথা গাঙচিল
•বড়ঠোঁটি গাঙচিল
•হলদেপা গাঙচিল
•নদীচিল
এরা দৈর্ঘ্যে ৩২-৩৫ সেন্টিমিটার। স্ত্রী-পুরুষ পাখি দেখতে একই রকম। প্রজনন পালক ভিন্ন। মাথায় টুপি আকৃতির ঘন কালো পালক, যা ঘাড়ের উপরিভাগ অবধি নেমে গেছে। পিঠ, ডানা ও লেজ সাদাটে ধূসর। ডানা এবং লেজের অগ্রভাগ সরু। গলা সাদা। বুক ধূসর কালো। বুকের নিচ থেকে লেজতল পর্যন্ত গাঢ় কালো। ওড়ার পালক সাদা। চোখের কালো। হলুদ ঠোঁটের গোড়ার দিক মোটা হলেও প্রান্তটা সুচালো। পা ও আঙ্গুল কমলা হলুদ।
প্রধান খাবারঃ ছোট মাছ। এ ছাড়াও বালুচরে ঘুরে পোকামাকড়, সরীসৃপ, শুককীট খেতে দেখা যায়। প্রজনন মৌসুম ফ্রেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত। অঞ্চলভেদে প্রজনন মৌসুমের হেরফের রয়েছে। জলাশয়ের কাছাকাছি বেলাভূমি এলাকায় ঘাস, লতাপাতা বিছিয়ে বাসা বানায়। ডিম পাড়ে ২-৫টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ২২-২৩ দিন। শাবক স্বাবলম্বী হতে ৪-৫ সপ্তাহ সময় লাগে।
লেখকঃ আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামিস্ট ও বন্যপ্রাণী বিশারদ।