খয়রা গাছপেঁচা আবাসিক পাখি খয়রা গাছপেঁচা। অসুলভ থেকে বিরল দর্শন। ১৯৯২ সালের দিকে মধুপুরের শালবনে দেখা যাওয়ার তথ্য রয়েছে। বিচরণ করে ক্রান্তীয় ও শীতপ্রধান বনাঞ্চলে অথবা মিশ্র চিরসবুজ বনে। একাকী খুব কম দেখা যায়, বেশির ভাগই জোড়ায় জোড়ায় বিচরণ করে। নিশাচর লাজুক পাখি। দিনে বড় গাছের ঘন পাতার আড়ালে কিংবা গাছের কোটরে লুকিয়ে থাকে। এ সময় ওদের চোখে থাকে ঘুমের আবেশ। চোখের পাতা সম্পূর্ণ প্রসারিত করতে পারে না। কেবল রাতের আঁধার ঘনিয়ে এলেই শিকারের উদ্দেশে বেরিয়ে পড়ে। নিঃশব্দে উড়তে পারে। ৯০ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে মাথা ঘোরাতে সক্ষম। শিকার পাকড়াতে এ দুটি গুণ বেশ কাজে দেয়।
এরা ‘হু-হুহুহু’ সুরে ডেকে ওঠে মানুষের পিলে চমকে দেয়। আসলে এরা মোটেই ভয়ঙ্কর নয়, বরং স্বভাবে ভীতু হয়। তবে দেখতে হিংস মনে হতে পারে। আসলে একেবারেই নিরীহ প্রকৃতির পাখি ‘খয়রা গাছপেঁচা’। বাংলাদেশ ছাড়া বৈশ্বিক বিস্তৃতি ভারত, শ্রীলঙ্কা, দক্ষিণ মিয়ানমার, মালয় উপদ্বীপ, সুমাত্রা, দক্ষিণ থাইল্যান্ড ও পশ্চিম জাভা পর্যন্ত। বিশ্বে এদের অবস্থান সন্তোষজনক নয়। আইইউসিএন এদের লাল তালিকাভুক্ত করেছে, বাংলাদেশেও ভালো অবস্থানে নেই।
পাখির বাংলা নামঃ খয়রা গাছপেঁচা, ইংরেজি নামঃ ব্রাউন উড আউল, (Brown wood owl), বৈজ্ঞানিক নামঃ Strix leptogrammica |
আরো পড়ুন…
•খয়রা মেছো পেঁচা
•কোটরে পেঁচা
•ডোরা কালিপেঁচা
•ছোটকান পেঁচা
•চিতিপেট হুতুমপেঁচা
•খাকি ভুতুম পেঁচা
•ভূমা পেঁচা
•উদয়ী নিমপেঁচা
•হলদেবাদামি ভূতম পেঁচা
•কালো পেঁচা
•লক্ষ্মীপেঁচা
দৈর্ঘ্য কমবেশি ৪৫-৫৭ সেন্টিমিটার। ওজন ৫০০-৭০০ গ্রাম। স্ত্রী-পুরুষ দেখতে একই রকম। ঝুঁটিহীন মাথা দারুচিনি-বাদামি রঙের। পিঠ কালচে-বাদামি। ডানা ও লেজ ঢাকনি গাঢ় বাদামির ওপর অসংখ্য ঢেউ খেলানো আড়াআড়ি রেখা। ডানায় গাঢ় ডোরার ওপর সাদা পট্টি। থুতনি কালো। গলা সাদাটে। গলার নিচ থেকে বস্তিপ্রদেশ পর্যন্ত হলুদাভ-বাদামির ওপর অসংখ্য মিহি ঢেউ খেলানো আড়াআড়ি রেখা, যা নখর পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। ঠোঁট ফ্যাকাসে রঙের, আকারে খাটো। চোখের বলয় কালচে, তারা গাঢ় বাদামি, ভ্রু সাদাটে। পা হলদেটে, নখর শিং কালো।
প্রধান খাবারঃ ইঁদুর, সরীসৃপ ও ছোট পাখি। প্রজনন মৌসুম জানুয়ারি থেকে মার্চ। অঞ্চলভেদে প্রজনন মৌসুমের হেরফের দেখা যায়। বাসা বাঁধে গাছের কোটরে। ডিম পাড়ে ২টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে মাসখানেকের মতো।
লেখকঃ আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।