বড় জলকবুতর | Great Black headed Gull | Larus ichthyaetus

254
Great Black headed Gull
বড় জলকবুতর | ছবি: ইন্টারনেট

সুলভ দর্শন পরিযায়ী পাখি। কেবল শীতে এ প্রজাতির আগমন ঘটে এ দেশে। পরিযায়ী হয়ে আসে দক্ষিণ রাশিয়া ও উত্তর-পূর্ব মঙ্গোলিয়া থেকে। আশ্রয় নেয় বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে। বাংলাদেশ ছাড়াও শীতে এ প্রজাতির সাক্ষাৎ মেলে ভারত ও পাকিস্তানে। শীত মৌসুমে খাবারের সন্ধানে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের নদ-নদীতে বিচরণ করতে দেখা যায় জলকবুতরকে। রাজধানীর পাশে বহমান বুড়িগঙ্গা নদীতেও দেখা মেলে এদের। তবে পরিযায়ী এ পাখি মিঠা পানির চেয়ে নোনা পানিতে বিচরণ করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে বেশি। সাগরের কাছাকাছি এলাকায় বেশি দেখা যাওয়ার মূল কারণ এটাই।

জলকবুতর বিচরণ করে ঝাঁক বেঁধে। চলাচলরত নৌযানকে অনুসরণ করতে দেখা যায় প্রায়ই। নৌযানের পেছন পেছন চক্কর মেরে উড়ে পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে। উদ্দেশ্য একটাই, মাছ শিকার। শীতে নৌযাত্রীরা প্রায়ই দৃশ্যটি দেখার সুযোগ পেয়ে থাকে। আর সেই দৃশ্য উপভোগ করার মতোই। এ ছাড়া প্রজাতিটিকে বালুতটে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়। বিশেষ করে দ্বীপাঞ্চলের জেলেপল্লীতে ওরা ঘুরঘুর করে। মূলত পল্লীর এখানে সেখানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা মরা মাছ খাওয়ার লোভেই ওদের ঘোরাঘুরি। জলকবুতর স্বভাবে শান্ত। ঝগড়াঝাঁটি পছন্দ নয়। নিজেদের মধ্যে খুনসুটি বেধে গেলে বিরক্ত হয়ে কর্কশ কণ্ঠে ডেকে ওঠে ‘ক্রাআ-ক্রা-আ’। শীত মৌসুমে এ প্রজাতির উপস্থিতি দেশে সন্তোষজনক। শিকারি পাখি ছাড়া এদের পারতপক্ষে কেউ তেমন একটা বিরক্ত করে না। ফলে এরা আমাদের দেশে ভালো অবস্থানেই রয়েছে বলা যায়।

পাখিটির বাংলা নামঃ বড় জলকবুতর, ইংরেজি নামঃ গ্রেট ব্ল্যাক-হেডেড গাল (Great Black-headed Gull),  বৈজ্ঞানিক নামঃ Larus ichthyaetus | এরা ‘কালোশির গঙ্গা কবুতর’ নামেও পরিচিত।

বড় জলকবুতর লম্বায় ৭০ সেন্টিমিটার হয়ে থাকে। ডানার দৈর্ঘ্য প্রসারিত অবস্থায় ১৪২ থেকে ১৭০ সেন্টিমিটার। শীতে রং বদলায়। এ সময় মাথায় সাদার ওপর কালো ছোপ দেখা যায়। শীত কেটে গেলে মাথা ধীরে ধীরে কালো রং ধারণ করে। শুধু চোখের ওপরে ও নিচে অর্ধচন্দ্রাকারে সাদা ছোপ। দেহজুড়ে সাদা রঙের পালক, কেবল ডানার ওপরের দিক ও পিঠ ধূসর। ওড়ার পালকে সাদার ওপর কালো ফোঁটা। দেহতল ধূসর-ফিকে। ঠোঁট মোটা হলুদ। ঠোঁটের ডগা কালো-লালচে। পা ও আঙুল হলুদ। স্ত্রী-পুরুষ উভয় পাখি দেখতে একই রকম।

প্রধান খাবারঃ মাছ। তবে বালুচরে ঘুরে পোকামাকড় খেতেও দেখা যায়। প্রজনন মৌসুম মধ্য এপ্রিল। বাসা বাঁধে জন্মভূমিতেই। জলাশয়ের কাছাকাছি ভূমিতে ঘাস, লতাপাতা বিছিয়ে বাসা বানায়। ডিম পাড়ে দুই থেকে ছয়টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ২১ থেকে ২৭ দিন। আর বাচ্চার স্বাবলম্বী হতে সময় লাগে ৩০ থেকে ৪২ দিন।

লেখকঃ আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।