উদয়ী নিমপেঁচা | Oriental Scops Owl | Otus sunia

319
উদয়ী নিমপেঁচা
উদয়ী নিমপেঁচা | ছবি: ইন্টারনেট

উদয়ী নিমপেঁচা সুলভ দর্শন আবাসিক পাখি। দেখা যায় পর্ণমোচী এবং মিশ্র বনাঞ্চলে। চিরহরিৎ বন ওদের পছন্দের না হলেও কমবেশি নজরে পড়ে। কাছাকাছি জনবসতি আছে এমন বনভূমি বা ফলের বাগানে দেখা যায়। দেখতে ভয়ঙ্কর দর্শন। গোলাকার চোখ। মাথার দু’পাশে ঝুঁটি আকৃতির কান পশম রয়েছে। ওদের শারীরিক গঠনে যে কেউ ভয় পেতে পারেন। অবশ্য যে কোনো ধরনের পেঁচা দেখলে মানুষের ভেতর ভয় জাগতে পারে। ভয় পেতে পারেন ওদের গম্ভীর কণ্ঠস্বর শুনেও। এদের বেলায়ও তদ্রুপ। আসলে এরা একেবারেই নিরীহ পাখি।

অন্যসব শিকারি পাখিদের মতো মোটেও হিংস্র নয়। চুপচাপ থাকতে পছন্দ করে। চোখজোড়া প্রসারিত করে তাকায়। ভয় পাওয়ার অবশ্য এটিও একটি কারণ হতে পারে। আদতে এরা ভীতু প্রকৃতির নিশাচর পাখি। রাতের আঁধার ঘনিয়ে এলে ওরা শিকারে বের হয়। বনজ এলাকায় খাদ্যের সন্ধানে ঘুরে বেড়ায়। একাকী কিংবা জোড়ায় জোড়ায় গাছের ডালে বসে থাকে। মাথা ঘুরিয়ে চারদিকে উড়ন্ত পোকামাকড়ের খোঁজখবর নেয়। খোঁজখবর নেয় ইঁদুর বা সরীসৃপ জাতীয় প্রাণীরও। নাগালে ভেতর এলে কেবল ঝাঁপিয়ে পড়ে শিকারের ওপর। বৈশ্বিক বিস্তৃতি বাংলাদেশ ছাড়া ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, দক্ষিণ চীন, জাপান, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়া পর্যন্ত। বিশ্বে এদের অবস্থান সন্তোষজনক নয় বিধায় আইইউসিএন লাল তালিকাভুক্ত করেছে।

পাখির বাংলা নামঃ উদয়ী নিমপেঁচা, ইংরেজি নামঃ ওরিয়েন্টাল স্কোপ আউল, (Oriental Scops Owl), বৈজ্ঞানিক নামঃ Otus sunia | এরা ‘কালোদাগ বিশিষ্ট নিমপোখ’ নামেও পরিচিত।

আরো পড়ুন…
•খয়রা মেছো পেঁচা •কোটরে পেঁচা •ডোরা কালিপেঁচা •ছোটকান পেঁচা
•চিতিপেট হুতুমপেঁচা •খাকি ভুতুম পেঁচা •ভূমা পেঁচা •খয়রা গাছপেঁচা
•হলদেবাদামি ভূতম পেঁচা •কালো পেঁচা •লক্ষ্মীপেঁচা

দৈর্ঘ্য কমবেশি ১৮-২১ সেন্টিমিটার। ওজন ৭৫-৯৫ গ্রাম। মাথা বড়সড়ো। মাথার দু’পাশে কান পশম রয়েছে, যা ঝুঁটির মতো দেখায়। পিঠ ধূসর বাদামি। তার ওপর রয়েছে সাদা ছোপ। দেহের নিচের দিকে রয়েছে সাদাটের ওপর ডোরা-রেখা। চোখের তারা উজ্জ্বল হলুদ। ঠোঁট খাটো, বাদামি রঙের। পায়ের আঙুল ফ্যাকাসে সাদাটে। পা পালকে আবৃত হলেও আঙুল পালকমুক্ত। স্ত্রী-পুরুষের চেহারায় তফাত নেই।

প্রধান খাবারঃ পাহাড়ি কীটপতঙ্গ, গোবরে পোকা, ইঁদুর, টিকটিকিসহ অন্যান্য সরীসৃপ। প্রজনন মৌসুম এপ্রিল থেকে জুন। অঞ্চলভেদে প্রজনন মৌসুমের হেরফের লক্ষ্য করা যায়। মরা গাছের প্রাকৃতিক কোটরে ৩-৬টি ডিম পাড়ে। ডিম ফুটতে সময় লাগে ২৩-২৪ দিন। শাবক স্বাবলম্বী হতে মাসখানেক লেগে যায়।

লেখকঃ আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।