হাঁস প্রজাতির অনিয়মিত পরিযায়ী পাখি। বাংলাদেশে আগমন ঘটে সাইবেরিয়া অঞ্চল থেকে। দেখতে মন্দ নয়। অনেকটা দেশি পাতি হাঁসের মতো দেখা গেলেও পার্থক্য রয়েছে বিস্তর। এদের মাথাটা উঁচু, শীতের টুপির মতো। আকর্ষণীয় চোখ। সোনালি বর্ণের চোখের সঙ্গে মিল রেখে নামকরণ হয়েছে ‘পাতি সোনাচোখ’। প্রজাতিটি বিশ শতকের গোড়ার দিকে সিলেটের হাওরাঞ্চলে দেখা যেত, হালে দেখার নজির নেই।
এদের বিচরণ ক্ষেত্র নদী, হ্রদ এবং হাওর-বাঁওড় বা বড় ধরনের জলাশয়ে। বিচরণ করে ছোট দলে, একাকী কম দেখা যায়। বিশেষ করে অগভীর জলে সাঁতার কেটে শিকার সংগ্রহ করে। খুব ধীরগতিতে শিকারের পিছু ধাওয়া করে। আবার ওড়েও ধীরগতিতে, ডানা ঝাঁপটিয়ে ওড়ে। তাই বলে অলস নয়, স্বভাবটাই অমন। ওড়ার সময় শিস কাটে। প্রজনন মৌসুমে কর্কশ কণ্ঠে ‘স্পির..স্পির..’ সুরে ডাকে। বাংলাদেশ ছাড়া বৈশ্বিক বিস্তৃতি উত্তর আমেরিকা, ইউরোপ ও এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চল পর্যন্ত। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে ভারত, নেপাল ও পাকিস্তানে দেখা যায়। প্রজাতিটি বিশ্বে বিপদমুক্ত। দর্শন নেই বিধায় বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এরা সংরক্ষিত নয়।
পাখির বাংলা নামঃ পাতি সোনাচোখ, ইংরেজি নামঃ কমন গোল্ডেন আই, (Common Goldeneye), বৈজ্ঞানিক নামঃ Bucephala clangula | এরা ‘সোনালি চোখ হাঁস’ নামেও পরিচিত।
লম্বায় ৪৫-৫২ সেন্টিমিটার। ওজন ৮০০ গ্রাম। স্ত্রী-পুরুষ পাখির চেহারা ভিন্ন। পুরুষ পাখি প্রজননকালীন রং বদলায়। এ সময় মাথা কালচে-সবুজ এবং মুখে গোলাকার সাদাপট্টি দেখা যায়। পিঠের পাশ থেকে দেহতল চকচকে সাদা। ডানা খাটো, সুঁচালো কালো রঙের। ঠোঁট কালো, অগ্রভাগ সামান্য বাঁকানো। চোখ সোনালি, পা ও পায়ের পাতা হলুদ-কমলা। প্রজননের বাইরে মাথা চকলেট-বাদামি। কালচে দেহের ডানায় সাদা পট্টি দেখা যায়। লেজ সেøট ধূসর। স্ত্রী পাখির দেহ ভিন্ন। মাথা বাদামি। চোখ ফ্যাকাসে হলুদ। পা ও পায়ের পাতা বাদামি-হলুদ।
প্রধান খাবারঃ জলজ পোকামাকড়, শামুক, ছোট চিড়িং ও উদ্ভিদের কচিডগা। প্রজনন মৌসুম এপ্রিল থেকে জুন। সাইবেরিয়াঞ্চলের গাছের প্রাকৃতিক গর্তে নরম পালক বিছিয়ে বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ৮-১৫টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ২৮-৩০ দিন। শাবক শাবলম্বী হতে সময় লাগে ৫৫-৬৫ দিন।
লেখকঃ আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।