এশীয় ফিঙেপাপিয়া, পাপিয়া প্রজাতির পাখি। চেহারা তত আকর্ষণীয় নয়। হঠাৎ নজরে পড়লে ফিঙে পাখি মনে হতে পারে যে কারোই। দূর থেকে দেখতে অনেকটা সে রকমই মনে হয়। ফিঙেদের মতো লম্বা চেরালেজটিও তদ্রপ গায়ের বর্ণেরও মিল রয়েছে হুবহু। মিল নেই শুধু মুখের চারপাশটা। তা ছাড়া এরা একটু মোটাসোটা ও খাটো। সে তুলনায় ফিঙে পাখি স্লিম। চেহারায় মিল থাকায় এ প্রজাতির পাপিয়াদের নামের সঙ্গে জুড়ে দেয়া হয়েছে ‘ফিঙে’ শব্দটি। প্রিয় পাঠক, এরা দেশের স্থায়ী বাসিন্দা। বিচরণ করে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের চিরসবুজ বনে। দেখা মেলে বনের কিনারেও।
লোকালয়ে খুব বেশি দেখা যাওয়ার নজির নেই। একাকী কিংবা জোড়ায় বিচরণ করে। এদের খাবার কৌশল ভিন্ন। সামান্য উড়ে খাবার খেয়ে পুনরায় উড়তে থাকে। স্থির হয়ে একগাদা খাবার খাওয়া ওদের পছন্দ নয়। প্রজনন মৌসুমে হাঁকডাক বেড়ে যায়। এ সময় গাছের উঁচু ডালে বসে ‘পিপ-পিপ-পিপ-পিপ…’ সুরে ডাকতে থাকে। পূর্ণিমার রাতেও ডাকাডাকি করে এরা। আর মেঘাচ্ছন্ন দিন হলে তো কথাই নেই। দিনভরই ডাকতে থাকে। বাংলাদেশ ছাড়াও এদের বৈশ্বিক বিস্তৃতি ভারত, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান ও চীন অবধি। প্রজাতিটি সমগ্র বিশ্বে বিপন্মুক্ত। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে সংরক্ষিত।
পাখির বাংলা নামঃ এশীয় ফিঙেপাপিয়া, ইংরেজি নামঃ এশিয়ান ড্রঙ্গো কুক্কু (Asian Drongo-Cuckoo), বৈজ্ঞানিক নামঃ Surniculus lugubris | এরা ‘ফিঙে কুলি’ নামেও পরিচিত।
আরো পড়ুন…
•দাগি তামাপাপিয়া
•বেগুনি পাপিয়া
•উদয়ী পাপিয়া
•ছোট পাপিয়া
•পাতি পাপিয়া
•করুণ পাপিয়া
লম্বায় ২৫ সেন্টিমিটার। স্ত্রী-পুরুষ পাখি দেখতে একই রকম। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির সমস্ত দেহ চকচকে কালো, কেবল মাথা ও ঘাড় ব্যতীত। ঘাড়ের পেছনে রয়েছে ক্ষুদ্র সাদা পট্টি, যা দূর থেকে নজরে পড়ে না। চেরালেজটি তুলনামূলক কম চকচকে। লেজের বাইরের পালকের গোড়ায় রয়েছে সাদা ডোরা। চোখ কালচে বাদামি। ঠোঁট বাদামি-কালো। অপ্রাপ্ত বয়স্কদের দেহ অনুজ্জ্বল কালো। লেজের নিচে সাদা ডোরা। এ ছাড়া মাথায় ও বুকে ফুটকি রয়েছে।
প্রধান খাবার: পোকামাকড়, ফল ও ফুলের রস। প্রজনন মৌসুম মে থেকে সেপ্টেম্বর। নিজেরা বাসা বাঁধতে জানে না। পেঙ্গা ও চেরালেজ পাখির বাসায় চুপিসারে ডিম পেড়ে পালিয়ে যায়। যার ফলে ওদের ডিমের সঠিক সংখ্যা নিরূপণ করা যায় না।
লেখকঃ আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।