পরিযায়ী এবং পান্থ পরিযায়ী উভয় স্বভাবই এদের মধ্যে লক্ষণীয়। পান্থ পরিযায়ী অর্থাৎ মূল গন্তব্যস্থলে যাওয়ার পথে কিছুদিনের জন্য কোথাও অবস্থান করে। সুলভ দর্শনও বটে। আমাদের দেশে শীতের প্রারম্ভে আগমন ঘটে। আসে সাইবেরিয়া অঞ্চল থেকে। দেখা মিলে উপকূলীয় এলাকার বালুবেলায়। আকারে খাটো হলেও চেহারা নাদুস-নুদুস। মোটামুটি মায়াবী গড়ন। অনেকটাই গোবেচারা টাইপ চেহারা। স্বভাবে শান্ত। নিজেদের মধ্যে অহেতুক ঝগড়া বাঁধায় না। শিকারে বের হয় একাকি কিংবা ছোট দলে। সৈকতে পায়চারী করে দিনভর। এরা স্বাভাবিকভাবে হাঁটে খুব কমই। দৌড়ের ওপর থাকে সারাক্ষণ। বলা যায় অকারণেও দৌড়ায়।
সৈকতে বিচরণরত অবস্থায় প্রহর গুণে ঢেউ সরে যাওয়ার। ঢেউ সরে গেলে ভেজা বালুকারাশিতে দ্রুত ঠোঁট চালিয়ে পোকামাকড় খুঁজে বেড়ায়। সাধারণত এরা জলে নেমে শিকার খুঁজে না। নামতে হয় তো বড়জোর হাঁটু সমান জলে নামে। বিচরণরত অবস্থায় কিছুক্ষণ পর পর উড়ে উড়ে স্থান পরিবর্তন করতে দেখা যায়। এ সময় তীক্ষ্ণ স্বরে ডাকে ‘উইক উইক উইক..’। বাংলাদেশে আগমন ঘটে অক্টোবর নাগাদ। ফিরে যায় মার্চ-এপ্রিলের মধ্যেই। দেশে ফেরার পরই প্রজনন মৌসুম শুরু হয়। বৈশ্বিক বিস্তৃতি দক্ষিণ আমেরিকা, দক্ষিণ ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া ও আফ্রিকা পর্যন্ত।
পাখির বাংলা নামঃ বালুবেলার চা পাখি, ইংরেজী নামঃ স্যান্ডারলিং, (Sanderling), বৈজ্ঞানিক নামঃ Calidris alba | এরা ‘বালুচরা’ নামেও পরিচিত।
লম্বায় ১৮-২০ সেন্টিমিটার। মাথা, ঘাড় ও পিঠে ফিকে বাদামির ওপর কালো দাগ। লেজ ধূসর, দুই পাশ সাদা। লেজের মধ্য পালকের ডগা বাদামি। গলা ও বুকে ফিকে বাদামির ওপর কালো দাগ। বুকের নিচ থেকে সাদা। প্রজনন মৌসুমে দেহতল ধবধবে সাদা দেখায়। ঠোঁট শক্ত, সোজা ও লম্বাটে, অগ্রভাগ সামান্য সূচলো। ঠোঁট, পা ও আঙ্গুল কালো। প্রজাতির অন্যদের মতো এদের পায়ের পেছনে আঙ্গুল নেই। স্ত্রী-পুরুষ পাখি দেখতে একই রকম।
প্রধান খাবারঃ কীটপতঙ্গ, কেঁচো ইত্যাদি। প্রজনন মৌসুম জুন-জুলাই। বাসা বাঁধে সাইবেরিয়া অঞ্চলে। এরা সরাসরি মাটিতে ঘাসলতা বিছিয়ে বাসা বানায়। ডিম পাড়ে ৩-৪টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ২৪-২৭ দিন
লেখকঃ আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।