সরু ঠোঁট ডুবরি হাঁস | Common Merganser | Mergus merganser

245
সরু ঠোঁট ডুবরি হাঁস
সরু ঠোঁট ডুবরি হাঁস | ছবি: ইন্টারনেট

সরু ঠোঁট ডুবরি হাঁস পুরুষ পাখি দেখতে ভারি চমৎকার। সে তুলনায় স্ত্রী পাখির চেহারা কিছুটা ম্লান। উভয়েরই লম্বা ধাঁচের শরীর, গড়নে হেরফের নেই তেমন একটা। বাংলাদেশে এরা অনিয়মিত পরিযায়ী পাখি। শীতে এদের আগমন ঘটে সাইবেরিয়া অঞ্চল থেকে। কালেভদ্রে দেখা মেলে আমাদের দেশে। এক সময় দেশের যমুনা নদীতে কিছুসংখ্যক পাখি দেখা যেত। দেখা যেত সিলেটের হাওরাঞ্চলেও। অবশ্য এতদাঞ্চলে দেখা যাওয়ার রেকর্ড খুব বেশি নেই। আর হালেও তেমন একটা দেখা যায় না।

মূলত এরা প্রবহমান নদ-নদীতে ঝাঁক বেঁধে বিচরণ করে। বিচরণকালীন ছোট-বড় দলে দেখা যায়। হাঁস গোত্রের অন্যসব পাখির মতো এরাও ডুবে ডুবে খাবার খুঁজে। তবে একটু ব্যতিক্রমী হচ্ছে, এরা স্রোতের বিপরীতে ডুবে শিকার খোঁজে।বছরের অন্যান্য সময়ে তেমন একটা হাঁকডাক না করলেও প্রজনন মৌসুমে পুরুষ পাখি ব্যাঙের মতো ‘ক্রে-ক্রে…’ সুরে ডাকে। এ সময় স্ত্রী পাখি মৃদু স্বরে ডাকে। বাংলাদেশ ছাড়াও বৈশ্বিক বিস্তৃতি ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপ পর্যন্ত। এরা বিশ্বে বিপন্মুক্ত। প্রজাতিটি বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে সংরক্ষিত নয়।

পাখির বাংলা নামঃ সরু ঠোঁট ডুবরি হাঁস, ইংরেজি নামঃ কমন মারগেঞ্জার, (Common Merganser), বৈজ্ঞানিক নামঃ Mergus merganser |

আরো পড়ুন…
•সুন্দরী হাঁস •বৈকাল তিলিহাঁস •ফুলুরি হাঁস •বড় সাদাকপাল রাজহাঁস
•ঝুঁটি হাঁস •নাকতা হাঁস •পিয়ং হাঁস •সাদা হাঁস
•নীলশির হাঁস •পাতারি হাঁস •লালশির হাঁস •ভাদি হাঁস
•মরচেরং ভূতিহাঁস •বালিহাঁস •উত্তুরে ল্যাঞ্জাহাঁস •পান্তামুখী হাঁস

লম্বায় ৫৮-৭২ সেন্টিমিটার (লেজ ১১ সেন্টিমিটার)। ওজন ১.২ কেজি। স্ত্রী-পুরুষ পাখির চেহারা ভিন্ন। প্রজননকালীন সময়ে পুরুষ পাখির রং বদলায়। এ সময় মাথা উজ্জ্বল সবুজাভ-কালো দেখায়। ঘাড় সাদা। পিঠের পাশের দিকটা সাদা। মধ্যখানের পালক কালচে। ডানার প্রান্তর কালচে। উড়ার পালক সাদা। লেজ ঢাকনি ধূসর। লেজ রুপালি-বাদামি। দেহতল সাদা। অন্যদিকে স্ত্রী পাখির মাথায় ঝুঁটি রয়েছে। মাথা, ঝুঁটি ও ঘাড় গাঢ় তামাটে। থুতনি সাদা। পিঠের মধ্য পালক নীলচের ওপর ধূসর-বাদামি ছিট দাগ। লেজ ধূসর-বাদামি। দেহতল সাদা। উভয় পাখির ঠোঁট সরু, অগ্রভাগ বাঁকানো। ঠোঁটের রং লাল-কমলা। চোখ লাল। পা ও পায়ের পাতা লাল।

প্রধান খাবারঃ মাছ, শামুক, কেঁচো, ব্যাঙ, কীটপতঙ্গ ও জলজ উদ্ভিদ। প্রজনন মৌসুম জুন থেকে জুলাই। বাসা বাঁধে সাইবেরিয়া অঞ্চলের গাছের প্রাকৃতিক কোটরে। বাসাতে উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে শুকনো পাতা, আর্বজনা, নরম পালক ইত্যাদি। ডিম পাড়ে ৮-১২টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ২৮-৩০ দিন।

লেখকঃ আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।