দেশি পানকৌড়ি | Indian Cormorant | Phalacrocorax fuscicollis

464
দেশি পানকৌড়ি
দেশি পানকৌড়ি | ছবি: ইন্টারনেট

প্রজাতির অন্য পানকৌড়ি সুলভ দর্শন হলেও দেশি পানকৌড়ি বিরল দর্শন বলা যায়। যত্রতত্র দেখা যাওয়ার নজির নেই। কেবল প্রচণ্ড শীতে সিলেট অঞ্চলের বড় বড় হাওর-বাঁওড় বা জলাশয়ে দেখা যায় এবং নদ-নদীতে অল্প বিস্তর দেখা যায়। বাংলাদেশ ছাড়াও প্রজাতির দেখা মেলে ভারতসহ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে। দেশি পানকৌড়ির সংখ্যা সমগ্র বিশ্বে স্থিতিশীল বিধায় আইইউসিএন ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত বলে ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে প্রজাতিটি সংরক্ষিত।

এদের স্বভাব প্রজাতির অন্যদের মতোই। শীতকালে নদী বা জলাশয়ের তীরে কঞ্চি অথবা লাঠিসোটায় বসে পাখা মেলে রোদ পোহাতে দেখা যায়। কিছু সময় গায়ে রোদ লাগিয়ে ঝপাত করে ঝাঁপিয়ে পড়ে জলে। তার পর ডুব সাঁতার দিয়ে পিছু নেয় মাছের। শিকার ধরতে পারলে ভুস করে ভেসে ওঠে জলের ওপরে। ঠোঁট দিয়ে চেপে ধরা মাছটাকে গলাটানা দিয়ে গলাধঃকরণ করে। এরা একটানা দীর্ঘক্ষণ ডুবতে পারে বলে অনেকেই এদেরকে ডুবুরি পাখি নামেও ডাকে। প্রিয় পাঠক, ইতোপূর্বে পানকৌড়ি নিয়ে বারকয়েক লেখা হয়েছে। তবে ওগুলো প্রজাতিভেদে ভিন্ন। আশা করি বিভ্রান্তিতে পড়বেন না।

পাখির বাংলা নামঃ দেশি পানকৌড়ি, ইংরেজি নামঃ ইন্ডিয়ান করমোর্যান্ট, (Indian Cormorant), বৈজ্ঞানিক নামঃ Phalacrocorax fuscicollis | এরা ‘মাঝারি পানকৌড়ি’ নামেও পরিচিত। আবার অঞ্চলভেদে ভিন্ন নামে পরিচিত। যেমন: পানিকাবাডি, পানিকাউর, পানিকাউয়া, পানিকুক্কুট ইত্যাদি। বাংলাদেশে তিন ধরনের পানকৌড়ির সাক্ষাৎ মেলে। যথাক্রমে: বড় পানকৌড়ি, মাঝারি বা দেশি পানকৌড়ি ও ছোট পানকৌড়ি। প্রজাতির সবাইকে মানুষ এক নামেই ডাকে।

আরও পড়ুন…
•বড় পানকৌড়ি •ছোট পানকৌড়ি

লম্বায় ৬৩-৬৫ সেন্টিমিটার। এদের সমস্ত শরীর কালো পালকে আবৃত। সূর্যালোকে পিঠ থেকে নীলাভ-সবুজের আভা বের হয়। অন্য সময়ে ধূসর কালো দেখায়। গলা মলিন সাদা। প্রজনন পালক ভিন্ন। ওই সময় কানপট্টি এবং ঘাড়ের ওপর উপরের যৎসামান্য চুলসাদৃশ পালক দেখা যায়। ঠোঁট বড়শির মতো বাঁকানো, সরু লম্বা। পা হাঁসের পায়ের পাতার মতো জোড়া লাগানো। চোখ লাল। স্ত্রী-পুরুষ পাখি দেখতে একই রকম।

প্রধান খাবারঃ মাছ। ছোট ব্যাঙ, জলজ পোকামাকড়ও খায়। প্রজনন মৌসুম জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি (অঞ্চলভেদে হেরফের হয়)। বাসা কলোনিটাইপ। শুকনো ডালপালা দিয়ে অনেকেই এক গাছে বাসা বাঁধে। বাসার শ্রীছাদ নেই। ডিমের সংখ্যা ৩-৫টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৭-১৯ দিন।

লেখকঃ আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামিস্ট ও বন্যপ্রাণী বিশারদ।