কোড়া পাখি | Watercock | Gallicrex cinerea

642
Watercock
কোড়া পাখি | ছবি: উইকিপিডিয়া

কোড়া’ স্থানীয় প্রজাতির সুলভ দর্শন পাখি। অঞ্চলভেদে অসুলভ দর্শন এরা। একটা সময় দেশের জলাশয়গুলোতে ব্যাপক নজরে পড়ত, হালে সে রকমটি নজরে পড়ছে না। শিকারিদের হাতে নির্যাতিত হয়ে ক্রমান্বয়ে অসুলভ হয়ে পড়ছে প্রজাতিটি। গত কয়েক দশক ধরে এদের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে কমে আসছে, তবে আশঙ্কাজনক পর্যায়ে পৌঁছায়নি। যার ফলে আইইউসিএন প্রজাতিটিকে ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত বলে ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশ ছাড়াও এদের বৈশ্বিক বিস্তৃতি ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, চীনের দক্ষিণাংশ, জাপান, ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইন পর্যন্ত। কোড়া পাখি স্বভাবে লাজুক হলেও প্রয়োজনে হিংস রূপ ধারণ করে।

বিশেষ করে পুরুষ পাখি প্রজনন মৌসুমে অন্য পুরুষকে প্রতিপক্ষ হিসেবে দেখে। সামনাসামনি হলে তো কথাই নেই, ভীষণ যুদ্ধ বাধিয়ে বসে ওরা। ওই সময় মানুষ বা অন্য কোনো প্রাণী কাছে গেলেও ওদের যুদ্ধ থামে না। ফলে সুযোগটি নেয় শিকারিরা, খপ্ করে দুটোকে ধরে ফেলে। এরা মূলত শিকারে বের হয় ঊষা ও গোধূলীলগ্নে। মেঘলা দিন এদের বেশ প্রিয় সময়। জলদামের আড়াল থেকে বেরিয়ে এসে ডাকাডাকি করে এ সময়। সুর গুরুগম্ভীর। ডাকে ‘উটুম্ব-উটুম্ব-উটুম্ব’ সুরে। কোড়া জলচর পাখি। জলজ উদ্ভিদের ওপর দিয়ে দ্রুত দৌড়াতে সক্ষম। উড়তে তেমন পারদর্শী নয়, ওড়ার সময় পা ঝুলে পড়ে।

পাখির বাংলা নামঃ কোড়া, ইংরেজি নামঃ ওয়াটার কক্, (Watercock), বৈজ্ঞানিক নামঃ Gallicrex cinerea |

লম্বায় পুরুষ পাখি ৪৩ সেন্টিমিটার, স্ত্রী পাখি ৩৬ সেন্টিমিটার। স্ত্রী-পুরুষ পাখি দেখতে একই হলেও প্রজনন মৌসুমে পুরুষ পাখির রঙ ভিন্নরূপ ধারণ করে। এ সময় পুরুষ পাখির গায়ের রঙ নীলচে কালো দেখায়। প্রজনন ঋতুর বাইরে উভয়ের দেহের উপরের দিক পাটকিলের ওপর গাঢ় রেখা দেখা যায়। দূর থেকে পিঠের পালক আঁশালো দেখায়। লেজ খাটো। দেহের নিম্নাংশ হলুদাভ-পাটকিলের ওপর সরু কালো টান। কপালে লাল ত্রিকোণ বর্ম। যা সামনে থেকে পেছনের দিকে খাড়া হয়ে মাথার উপরে উঠে গেছে। চোখের তারা গাঢ় বাদামি। পা হলুদাভ-সবুজ।

প্রধান খাবারঃ জলজ উদ্ভিদের বীজ ও কচিডগা, জলজ পোকামাকড় ইত্যাদি। প্রজনন মৌসুম জুন থেকে জুলাই। বাসা বাধে ভাসমান জলদামে অথবা ধানক্ষেতে বা আখক্ষেতে ঘাস-লতা বিছিয়ে। ডিম পাড়ে ৩-৬টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৫-১৬ দিন।

লেখকঃ আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।