দোয়েল স্থানীয় প্রজাতির অতি সুলভ দর্শন গায়ক পাখি। বাংলাদেশের জাতীয় পাখি। পাখিটার সঙ্গে দেখা মেলে যত্রতত্রই। বাড়ির আঙিনায় হরহামেশায় নেচে বেড়ায় দোয়েল। ঝিঙে লতা, আতা কিংবা পেয়ারা গাছের ডালে লেজ উঁচিয়ে শারীরিক কসরত দেখায়। গান গায় দারুণ মিষ্টিসুরে। গ্রীষ্মকালে খুব ভোরে ‘সুই..সুইস..’ সুরে শিস দিয়ে গান গায়। এ ছাড়াও দিনের যে কোনো সময়ে গান শোনা যায়। সেটি কিন্তু ভোরের গানের মতো সুরেলা নয়।
যাদের খুব ভোরে শয্যাত্যাগের অভ্যাস রয়েছে কানখাড়া করে রাখলেই তারা এদের মিষ্টি সুর শুনতে পাবেন। অবশ্য যদি আপনি শহরবাসী না হন। তাই বলে ভাববেন না শহরে এদের বিচরণ নেই। আলবত আছে। দেশের কোথায় নেই দোয়েল! নেই শুধু সদ্য জেগে ওঠা চরাঞ্চলে এবং সুন্দরবনে। এতদস্থানে দোয়েল বিচরণ না করার প্রধান কারণই হচ্ছে জনবসতির অভাব। অর্থাৎ যেখানে মানুষ নেই, সেখানে দোয়েল নেই।
সুন্দর এ পাখির বাংলা নামঃ দোয়েল, ইংরেজি নামঃ ওরিয়েন্টাল ম্যাগপাই রবিন, (Oriental magpie-robin), বৈজ্ঞানিক নামঃ Copsychus saularis | অঞ্চলভেদে এদের ডাকা হয় দৈয়াল, দহিয়াল, দইনাচানি ও দইকুলি ইত্যাদি।
প্রজাতিটি লম্বায় ২৩ সেন্টিমিটার। স্ত্রী-পুরুষ পাখি রং ভিন্ন। পুরুষ পাখির মাথা, ঘাড় থেকে লেজের প্রান্ত পর্যন্ত নীলাভ-কালো। ডানার দু’পাশে সাদাটান। থুতনি, গলা ও বুক নীলাভ-কালো। পেট থেকে লেজের তলা পর্যন্ত ধবধবে সাদা। স্ত্রী পাখি রং নিষ্প্রভ। পুরুষ পাখির ক্ষেত্রে যে সব স্থানে কালো রং, স্ত্রী পাখির ক্ষেত্রে তা ধূসর। উভয়ের চোখের মণি, ঠোঁট, পা ও আঙ্গুল কালো।
প্রধান খাবারঃ কীটপতঙ্গ। এ ছাড়াও ফুলের মধু, ছোট নরম ফল ও খেজুরের রস খায়। প্রজনন মৌসুম মার্চ থেকে জুলাই। বাসা বাঁধে গাছের কোটরে কিংবা দর-দালানের ফাঁকফোকরে। বাসা বানাতে উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে শুকনো ঘাসের চিকন ডগা, সরু শিকড় ও নরম খড়কুটো। ডিম পাড়ে ৩-৫টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১২-১৫ দিন।
লেখকঃ আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামিস্ট ও বন্যপ্রাণীবিষয়ক লেখক।