ঘুরঘুরি | Baillon’s Crake | Porzana pusilla

177
ঘুরঘুরি
ঘুরঘুরি | ছবি: ইন্টারনেট

ঘুরঘুরি হিমালয় অঞ্চলের পাখি হলেও দেখা মেলে ইউরোপ, আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া ও উত্তর আমেরিকার বিভিন্ন এলাকায়। শীতে পরিযায়ী হয়ে আসে আমাদের দেশে। বিচরণ করে সুপেয় জলের জলাশয়ের কিনারে। বিশেষ করে বাদাবনে এরা আশ্রয় নেয় বেশি। হোগলা বন এদের খুবই প্রিয়। হোগলা বনের ভেতর হেঁটে হেঁটে পোকামাকড় খুঁজে ব্যস্ত সময় পার করে। এ ছাড়াও বড় বড় হাওর-বাঁওড়ের কিনারেও এদের দেখা যায়। অত্যন্ত লাজুক প্রকৃতির পাখি এরা। খুব সহজে নজরে পড়ে না, লোকচক্ষুর অন্তরালে থাকে সবসময়। অন্যসব প্রজাতির মতো এরা প্রজনন মৌসুমে খুব একটা ডাকাডাকি করে না। অনেকটাই নীরবে নিভৃতে কাটিয়ে দেয় এ বিশেষ মুহূর্ত।

প্রিয় পাঠক, এরা অতি বিরল প্রজাতির পাখি। দেশে খুব বেশি দেখা যায় না। এরা নির্যাতিত হলে বা শিকারির খপ্পরে পড়লে উদ্ধার করার চেষ্টা করবেন। শুধু এদেরকে নয়, যে কোনো প্রজাতির পাখি নির্যাতিত হলে আপনারা এগিয়ে আসবেন। আমাদের মনে রাখতে হবে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় পশু-পাখির ভূমিকা অপরিসীম। কাজেই শিকারিদেরকে প্রতিহত করতে হবে। সবাই মিলে পরিবেশটাকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে। ইচ্ছে করলে তরুণসমাজ দেশ থেকে শিকারিমুক্ত করতে পারেন। পাড়া-মহল্লায় শিকারিদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলে বোধকরি দেশ শিকারিমুক্ত হবে বলে আমাদের বিশ্বাস রয়েছে।

পাখির বাংলা নামঃ ঘুরঘুরি, ইংরেজি নামঃ বেলুনস ক্রেক (Baillon’s Crake), বৈজ্ঞানিক নামঃ পরজানা পুসিল্লা, (Porzana pusilla), গোত্রের নামঃ রাল্লাদি । এরা ‘বেইলন গুরগুরি’ নামেও পরিচিত।

আরো পড়ুন…
•রাঙ্গা ঘুরঘুরি •চিত্রা ক্রেক

বাদাবনে খানিকটা বেশি পরিলক্ষিত হয় বিধায় পাখি বিশারদদের কেউ কেউ ‘বাদা কুক্কুট’ নামে ডাকেন। মূলত এরা ডাহুক গোত্রের পাখি। দেখতেও কিছুটা সেরকম। পাখি লম্বায় ১৭-১৯ সেন্টিমিটার। পুরুষ পাখির রঙ ভিন্ন। ওদের মাথা পাটকিলে বাদামি। মুখ, গলা ও বুক নীলাভ-ধূসর। পিঠ পাটকিলে-বাদামির ওপর সাদা-কালো ফুটকি। বুকের মাঝখান থেকে লেজের নিচের অংশ কালচে ধূসর। ঠোঁট সবুজ। পা ও পায়ের পাতা জলপাই রঙের। চোখের মণি লালচে। স্ত্রী পাখি পুরুষের তুলনায় অনুজ্জ্বল। উভয়েরই ডানা ও লেজ খাটো।

প্রধান খাবারঃ জলজ পোকামাকড়। এ ছাড়াও জলজ উদ্ভিদের কচি পাতা খায়। প্রজনন সময় মে-আগস্ট। বাসা বাঁধে জলজ ধান ক্ষেতে কিংবা পাহাড়ি জলাশয়ের কাছাকাছি। বাসা বানাতে উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে ঘাস লতাপাতা। ডিম পাড়ে ৪-৬টি।

লেখকঃ আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামিস্ট ও বন্যপ্রাণী বিশারদ।