লালশির হাঁস শীতের পরিযায়ী পাখি। দেশের উপকূলীয় অঞ্চলের নদী এবং হাওর অঞ্চলে দেখা যায়। দেখা যায় অগভীর নদী-নালা, জোয়ার-ভাটার খাঁড়ি, লবণের ঘের এলাকায়ও। এসব অঞ্চলে এরা বড় বড় ঝাঁকে বিচরণ করে। খাদ্যের সন্ধানে জলাশয়ের কিনারে হেঁটে বেড়ায়। আবার মাথা ডুবিয়েও খাদ্য সংগ্রহ করে। জলাশয়ের উপরাংশের খাবার এদের বেশি পছন্দ। যেমন তা হতে পারে জলজ উদ্ভিদ কিংবা কচি ঘাসের ডগা। এরা যেমনি হাঁটতে পারে দ্রুত, তেমনি দ্রুত গতিতে উড়তেও সক্ষম। ওড়ার সময় ‘শন শন’ শব্দ শোনা যায়। পুরুষ পাখি ডাকে ‘হুউহিও… হুউহিও…’ সুরে। স্ত্রী পাখি ডাকে ‘এরর্র… এরর্র…’ সুরে।
সুলভ দর্শন এ পাখি বাংলাদেশ ছাড়াও দেখা যায় ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, ফিলিপাইন ও চীনে। প্রচণ্ড শীতে এরা পরিযায়ী হয়ে আসে ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা, সাইবেরিয়া ও আফ্রিকার উত্তরাংশ থেকে। ঠাণ্ডা কম অনুভূত হলে ফিরে যায় নিজ বাসভূমে। সংসার পাতে মাতৃভূমিতেই। জানা যায়, বিশ্বে প্রায় ১ কোটি ২৯ লাখ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে এদের বিস্তৃতি। বিগত কয়েক দশক ধরে এদের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাচ্ছে। তথাপিও এরা বিশ্বে বিপন্মুক্ত। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে প্রজাতিটি সংরক্ষিত।
প্রজাতির বাংলা নামঃ লালশির | ইংরেজি নামঃ ইউরেশিয়ান ওজিয়ন, (Eurasian wigeon) | বৈজ্ঞানিক নামঃ আনাস পেনিলোপ, (Anas penelope), গোত্রের নামঃ অনাটিদি । অনেকে এদেরকে ‘হলদেসিঁথি হাঁস’ বা ‘ইউরেশীয় সিঁথিহাঁস’ নামে ডাকে।
আরো পড়ুন…
•সুন্দরী হাঁস
•বৈকাল তিলিহাঁস
•ফুলুরি হাঁস
•বড় সাদাকপাল রাজহাঁস
•সরু ঠোঁট ডুবরি হাঁস
•ঝুঁটি হাঁস
•নাকতা হাঁস
•পিয়ং হাঁস
•সাদা হাঁস
•নীলশির হাঁস
•পাতারি হাঁস
•ভাদি হাঁস
•মরচেরং ভূতিহাঁস
•বালিহাঁস
•উত্তুরে ল্যাঞ্জাহাঁস
•পান্তামুখী হাঁস
এ পাখি লম্বায় ৪২-৫২ সেন্টিমিটার। ওজন ৬৫০-৬৭০ গ্রাম। পুরুষ পাখির মাথা তামাটে। কপালের মধ্যখানে হলুদ সিঁথির মতো টান, যা কেবল প্রজনন ঋতুতে দেখা যায়। ডানায় সাদা পট্টি। ডানার নিচের দিকে ধূসর। পিঠে মিহি ধূসর রেখা। বুক হালকা বাদামি। পেট সাদা। লেজের নিচের দিকে কালো। লেজ সূচালো। স্ত্রী পাখির রঙ ভিন্ন। ওদের মাথায় হলদেসিঁথি নেই। নেই পিঠের ধূসর রেখাও। স্ত্রী পাখির দেহের অধিকাংশ পালক তামাটে। উভয়ের চোখ বাদামি। ঠোঁট ধূসর-নীল মিশ্রিত।
প্রধান খাবারঃ পোকামাকড়, ভেজা ঘাস, জলজ উদ্ভিদ। প্রজনন সময় জুন থেকে সেপ্টেম্বর। সাইবেরিয়া অঞ্চলে বাসা বাঁধে। জলজ ঝোপের কাছাকাছি মাটিতে ঘাস বা পালক বিছিয়ে বাসা বানায়। ডিম পাড়ে ৭-১২টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ২৪-২৫ দিন।
লেখকঃ আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।