কালিবক | Black bittern | Ixobrychus flavicollis

304
কালিবক
কালিবক | ছবি: ইবার্ড

কালিবক বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং ওশানিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে এদের দেখা যায়। বিশ্বের প্রায় ৮৬ লাখ ৯০ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাব্যাপী এদের বিস্তৃতি। দেশের দক্ষিণাঞ্চলে এদের অল্প-বিস্তর সাক্ষাৎ মেলে। সাক্ষাৎ মেলে হাওরাঞ্চলেও। অন্যান্য স্থানেও তেমন সন্তোষজনক নয় এদের অবস্থান। গত কয়েক দশক ধরে ক্রমান্বয়ে এদের সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে বিধায় আইইউসিএন প্রজাতিটিকে ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত বলে ঘোষণা দিয়েছে। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতির বক পাখি সংরক্ষিত।

এরাও শিকারি পাখি। তবে বেশ চালাক-চতুর এবং তুখোড় শিকারি এরা। নলখাঘড়া বা হোগলার বন এদের দারুণ পছন্দ। নিজেদেরকে আত্মগোপন করতে উপযুক্ত স্থান হিসেবে বেছে নেয় এসব এলাকা। বিপদের গন্ধ পেলে এতদ এলাকায় এরা ঘাড়-মাথা-ঠোঁট সমান্তরালে রেখে ঊর্ধ্বমুখী হয়ে স্থির দাঁড়িয়ে থাকে। শত্র“ কাছাকাছি এলে উপরের দিকে লাফ মারে। ঊর্ধ্বমুখী লাফে প্রায় চার থেকে সাড়ে চারফুট পর্যন্ত উপরে উঠতে পারে। বিপদ কেটে গেলে স্বাভাবিক অবস্থানে ফিরে আসে।

এদের প্রধান শত্রু মানুষ। সামান্য মাংসের লোভে ফাঁদ পেতে শিকারিরা শিকার করে অস্তিত্ব সংকটে ফেলে দিচ্ছে। এ ছাড়াও ভোঁদড় বা বেজি এদেরকে যথেষ্ট বিরক্ত করে। সুযোগ পেলে ঘাড়ে লাফিয়ে পড়ে। শিকারে বের হয় নিয়ম মেনে, ভোর এবং গোধূলিলগ্নে। দেশের একজন পাখি বিশারদ জানিয়েছেন, এরা জোসনালোকেও নাকি শিকারে বের হয়। তবে সে রকম দৃশ্য অবলোকন করতে সক্ষম হইনি এখনো।

পাখির বাংলা নামঃ কালিবক, ইংরেজি নাম ব্লাক বিটার্ন, (Black bittern), বৈজ্ঞানিক নামঃ Ixobrychus flavicollis | এরা ‘কালা বগলা’ নামেও পরিচিত।

আরো পড়ুন…
•গো বক •সবুজ বক •বেগুনি বক •খুন্তে বক •হলদে বক •রঙিলা বক
•ধূসর বক •দেশি কানিবক •ছোট ধলা বক •নলঘোঙ্গা •নিশিবক

কালিবক লম্বায় ৪৮ সেন্টিমিটার। মাথার তালু চকচকে স্লেট বর্ণের। ঘাড়, গলা হয়ে পিঠে কালো রঙ ছড়িয়ে গেছে। গলার নিচ দিয়ে কমলা-নীল চওড়া রেখা ঘাড়ের পাশ হয়ে বুকে এসে মিশেছে। বুকে খাড়া কালচে টান। ঠোঁট লালচে ধূসর। পা ও পায়ের পাতা গাঢ় বাদামি। স্ত্রী-পুরুষ দেখতে প্রায় একই রকম।

প্রধান খাবারঃ ছোট মাছ, ব্যাঙ, পোকামাকড়, ফড়িং ইত্যাদি। প্রজনন সময় সেপ্টেম্বর থেকে এপ্রিল। জলাশয়ের কাছাকাছি গাছের ডালে চিকন ডালপালা দিয়ে বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ৩-৫টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ২০-২১ দিন।

লেখকঃ আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামিস্ট ও বন্যপ্রাণী বিশারদ।