পাতি বাটান | Common Sandpiper | Actitis hypoleucos

747
পাতি বাটান
পাতি বাটান | ছবি: ইবার্ড

পান্থপরিযায়ী পাখি পাতি বাটান । প্রজাতির অনেকে পরিযায়ী হয়ে এসে দীর্ঘ সময় কাটিয়ে দেয় আমাদের দেশে। এরা উত্তর ও পূর্ব এশিয়া থেকে পরিযায়ী হয়ে আসে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়। এ প্রজাতির পাখিরা অতি সুলভ দর্শন। পরিচিতও বটে। বিশেষ করে সুন্দরবন এবং উপকূলীয় অঞ্চলে প্রচুরসংখ্যক সাক্ষাৎ মেলে। এছাড়াও হাওর-বাঁওড় এলাকায় ব্যাপক বিচরণ রয়েছে। দেশের একজন বিশিষ্ট পাখি বিশারদ জানিয়েছেন, এদের বিচরণ রয়েছে রাজধানী শহরের গুলশান লেকের কাছেও। এ প্রজাতির পাখি বেশিরভাগই একাকী বিচরণ করে, আবার ছোট দলেও দেখা যায়।

প্রায় সারাদিনই নদী কিংবা সমুদ্রতটে ছুটে বেড়ায়। ঢেউয়ের তোড়ে জলজ পোকামাকড় কিনারে আচড়ে পড়লে তা খেয়ে নেয়। আর জল ঘেঁষে ঘন ঘন লেজ নেড়ে মাথা ঝাঁকিয়ে হাঁটতে থাকে। তবে এরা যাই করুক না কেন লক্ষ্য কিন্তু একটাই থাকে ওদের, আর তা হচ্ছে শিকারের খোঁজ নেয়া। মোটামুটি শান্ত প্রকৃতির পাখি। অযথা চেঁচামেচি করে না। সময় সুযোগ বুঝে সুরেলা কণ্ঠে ‘হুইট..হুইট.. কিটি হুইট..কিটি হুইট..’ সুরে ডাকে। আমি অনেকবার এদের সাক্ষা’ পেয়েছি উপকূলীয় অঞ্চলে, শুনেছি সুরেলা কণ্ঠও। আমার ছেলে আলম রাইন ওদের ভিডিও চিত্র ধারণও করেছে একাধিকবার। সময় পেলে মাঝে মাঝে দেখি ওসব বাবা-ছেলে মিলে।

এ পাখির বাংলা নামঃ পাতি বাটান, ইংরেজি নামঃ কমন স্যান্ডপাইপার, (Common Sandpiper), বৈজ্ঞানিক নামঃ একটাইটিস হাইপোলিউকস, (Actitis hypoleucos), গোত্রের নামঃ স্কোলোপাসিদি । এরা চাপাখি বা ছোট বালুবাটান নামেও পরিচিত।

আরো পড়ুন…
•শুক্তিভোজী বাটান •কাদা বাটান •পদ্মবাটান •লাল নুড়িবাটান
•কাঁকড়াভোজী বাটান •কালোবুক বাটান •ছোট বাবুইবাটান •গুলিন্দা বাটান

লম্বায় ১৮-২০ সেন্টিমিটার। মাথা ও ঘাড় ধূসরাভ বাদামির ওপর ডোরা দাগ। থুতনি ও গলা সাদা। চোখের ওপরের দিকেও রয়েছে সরু সাদা টান। দেহের উপরাংশ গাঢ় ধূসর। নিতম্ব বাদামি। পিঠ ও ডানার ওপর সরু আড়াআড়ি লাইন। বুকের নিচ থেকে বাকি অংশ সাদা। ঠোঁট কালচে। পা সবুজাভ হলুদ। স্ত্রী-পুরুষ দেখতে একই রকম।

প্রধান খাবারঃ জলজ পোকামাকড়। মানুষের ফেলে দেয়া রুটি-বিস্কুট খায় এরা। প্রজনন মৌসুম মে থেকে জুন। বাসা বাঁধে লাডাখ, গাড়োয়াল ও কাশ্মীর অঞ্চলের ৩২০০ মিটার উচ্চতায় পাথুরে এলাকায়। বাসা বানাতে উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে শুকনো লতাপাতা। ডিম পাড়ে ৩-৪টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ২২-২৫ দিন।

লেখকঃ আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।