মরচেরং ভূতিহাঁস | Ferruginous pochard | Aythya nyroca

437
মরচেরং ভূতিহাঁস
মরচেরং ভূতিহাঁস | ছবি: ইন্টারনেট

মরচেরং ভূতিহাঁস ইউরোপ, আফ্রিকা ও মধ্য এশিয়ার পশ্চিমাঞ্চলের স্থায়ী বাসিন্দা। শীত মৌসুমে পরিযায়ী হয়ে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, নেপাল, ভুটান ও মালদ্বীপে আশ্রয় নেয়। তখন দেশের বড় বড় বিল অথবা হাওরাঞ্চলে সাঁতরে বেড়াতে দেখা যায়। এ পাখি বিশ্বে কিছুটা বিপদগ্রস্ত হলেও আমাদের দেশে সুলভ দর্শন। আন্তর্জাতিক পাখি শুমারির তথ্য মোতাবেক জানা যায়, সমগ্র বিশ্বে এ প্রজাতির পাখির সংখ্যা প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার। তন্মধ্যে আমাদের দেশেই এদের সংখ্যা মিলেছে ১ লাখের মতো। যার দরুন প্রজাতিটি বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে সংরক্ষিত ঘোষণা করা হয়নি।

এরা ছোট-ছোট দলে বিচরণ করে। ডুব সাঁতারে খুবই দক্ষ। ডুব দিয়ে জলের তলে পৌঁছে শিকার ধরে। বেশির ভাগ সময় রাতে শিকারে বের হয়। দিনে বিশ্রাম নেয় জলাশয়ের আশপাশের ডাঙ্গায়। সেই সুযোগটি নেয় শিকারিরা। ওরা বিভিন্ন ধরনের ফাঁদ পেতে অথবা বিষপ্রয়োগে এদেরকে হত্যা করে। এরা মোটামুটি শান্ত প্রজাতির পাখি। খুব বেশি হাঁকডাক না করলেও শীতে মাঝেমধ্যে কর্কশ কণ্ঠে ডাকে ‘কেররর..কেররর’ সুরে।

পাখির বাংলা নামঃ মরচেরং ভূতিহাঁস, ইংরেজি নামঃ ফেররুগিনাস পোচার্ড, (Ferruginous pochard), বৈজ্ঞানিক নামঃ আইথিয়া নাইরোকা, (Aythya nyroca)। গোত্রের নামঃ‘আনাটিদি । এরা সাদা আঁখি ভূতিহাঁস নামেও পরিচিত।

আরো পড়ুন…
•সুন্দরী হাঁস •বৈকাল তিলিহাঁস •ফুলুরি হাঁস •বড় সাদাকপাল রাজহাঁস
•সরু ঠোঁট ডুবরি হাঁস •ঝুঁটি হাঁস •নাকতা হাঁস •পিয়ং হাঁস
•সাদা হাঁস •নীলশির হাঁস •পাতারি হাঁস •লালশির হাঁস
•ভাদি হাঁস •বালিহাঁস •উত্তুরে ল্যাঞ্জাহাঁস •পান্তামুখী হাঁস

এ পাখি লম্বায় ৪০-৪১ সেন্টিমিটার। ওজন ৬০০ গ্রাম। শীত মৌসুমে মাথা, ঘাড় ও বুক তামাটে বাদামি রঙ ধারণ করে। বুকের নিচ থেকে লেজের তলা পর্যন্ত সাদা। ডানার তলার পালকে রয়েছে সাদা রেখা। ঠোঁট স্লেট রঙের। চোখ সাদা। পা ও পায়ের পাতা ধূসর। প্রজনন মৌসুমে পুরুষ পাখির মাথা, ঘাড় ও বুক অনুজ্জ্বল তামাটে দেখায়। এ সময় চোখ কালচে দেখায়। স্ত্রী পাখি পুরুষের তুলনায় অনেকখানি নিষ্প্রভ হলেও দেখতে একই রকম লাগে।

প্রধান খাবারঃ জলজ পোকামাকড়, ছোট চিড়িং, কেঁচো, জলজ উদ্ভিদের কচিডগা ইত্যাদি। প্রজনন সময় মে থেকে জুলাই। ট্রান্সবৈকালিয়া থেকে উসুরি, আমুর নদীর উপত্যকায় ও ইউরোপের বিভিন্ন স্থানের নলবনের ভেতর লতাপাতা জমিয়ে বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ৮-১২টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ২৫-২৭ দিন। শাবক ৫৫-৬০ দিনের ভেতর উড়তে পারে।

লেখকঃ আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।