বালিহাঁস | Cotton Pygmy goose | Nettapus coromandelianus

379
বালিহাঁস
বালিহাঁস | ছবিঃ ইবার্ড

বালিহাঁস বিশেষ করে পুরুষ পাখিটির রূপ অতুলনীয়। চেহারাটাও বেশ মায়াবী। প্রজনন মৌসুমে পুরুষ পাখির সৌন্দর্য আরো বেড়ে যায়। এমনিতেই তো দেখতে ভীষণ সুন্দর তার ওপর আরো সুন্দর লাগে তখন। এরা উড়তে উড়তেই ডাকে। ‘ডিক ডিক, ডিরিক ডিরিক’ সুরে আওয়াজ করে জলাশয় বা গাছ-গাছালির ওপর চক্কর মারে। আমাদের দেশে এক সময়ে যত্রতত্র দেখা যেত। বর্তমানে হাওরাঞ্চল বা বড় ধরনের জলাশয় ছাড়া খুব একটা দেখা যায় না। পাখি নিধনকারীদের অধিক লোভের কারণে আজ ওরা হারিয়ে যেতে বসেছে। অথচ একটা সময়ে এ পাখিরা যত্রতত্র বিচরণ করত দেশে। বিচরণ করতে দেখেছি আমার বাল্য বেলায় নানাবাড়ির পুকুরে। মামার মাধ্যমে পরিচিত হয়েছি এ পাখির সঙ্গে তখন। এক মামা ধরার চেষ্টাও করেছেন। অধিক চাতুরিতার কারণে ফাঁদে ফেলতে পারেননি।

এ পাখি সাধারণত মরা তাল, নারিকেল, খেজুর গাছের প্রাকৃতিক গর্তে বাসা বাঁধে। তবে ওদের প্রথম পছন্দ তালগাছ, দ্বিতীয় পছন্দ নারিকেল গাছের কোটর। এসব মরাগাছের মাথায় বৃষ্টির জল জমে প্রকৃতিগতভাবে গর্তের সৃষ্টি হলে এরা সেখানে বাসা বাঁধে। আমাদের দেশের বিশিষ্ট পাখি গবেষক শরীফ খান এ পাখি নিয়ে দীর্ঘদিন গবেষণা করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, ‘আমি নিজের তত্ত্বাবধানে এদের ডিম মুরগির তা দিয়ে ফুটিয়েছি। কিন্তু দুঃখের বিষয় বাচ্চাগুলো বাঁচিয়ে রাখতে পারিনি, তিনদিন পর্যন্ত বেঁচে ছিল।’

এ পাখির বাংলা নামঃ বালিহাঁস, ইংরেজি নামঃ কটন পিগমি গুজ বা কটন টিল, (Cotton Pygmy goose or Cotton Tealবৈজ্ঞানিক নামঃ নেট্টাপাস কোরোমানডেলিয়ানাস, (Nettapus coromandelianus) গোত্রের নামঃ আনাটিদি। এরা বেলেহাঁস নামেও পরিচিত।

আরো পড়ুন…
•সুন্দরী হাঁস •বৈকাল তিলিহাঁস •ফুলুরি হাঁস •বড় সাদাকপাল রাজহাঁস
•সরু ঠোঁট ডুবরি হাঁস •ঝুঁটি হাঁস •নাকতা হাঁস •পিয়ং হাঁস
•সাদা হাঁস •নীলশির হাঁস •পাতারি হাঁস •লালশির হাঁস
•ভাদি হাঁস •মরচেরং ভূতিহাঁস •উত্তুরে ল্যাঞ্জাহাঁস •পান্তামুখী হাঁস

বালিহাঁস লম্বায় ৩০-৩২ সেন্টিমিটার। আমাদের দেশের হাঁস প্রজাতির মধ্যে এরা সবচেয়ে ছোট আকৃতির। ঠোঁটের গোড়া থেকে মাথার তালু পর্যন্ত কালো। পুরুষ পাখির গলার নিচে চওড়া কালো ফিতার মতো বন্ধনী রয়েছে। পিঠ, ডানা কালো। চোখের চারপাশ, বুক, পেট সাদা। লেজের আগা কালচে। সূর্যের আলো পড়লে উজ্জ্বল সবুজের আভা ছড়িয়ে পড়ে। অন্যদিকে স্ত্রী পাখি পুরুষের তুলনায় অনেকখানি নিষ্প্রভ। ওদের গলায় সুদৃশ্য বন্ধনী নেই। গায়ের বর্ণ হালকা বাদামি ও সাদার মিশেল। আকারে পুরুষের চেয়ে সামান্য ছোট।

প্রধান খাবারঃ জলজ পোকামাকড়, জলজ উদ্ভিদের কচিডগা, শস্যবীজ ও ছোট মাছ। প্রজনন সময় জুন থেকে সেপ্টেম্বর। মরা নারিকেল, তাল, খেজুরগাছের কোটরে বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ৮-১২টি। স্ত্রী পাখি একাই ডিমে তা দেয়। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৫-১৭দিন। ডিম থেকে বেরুলেই শাবক গাছের কোটর থেকে নিচে লাফিয়ে পড়ে। অনেক সময় গাছের গর্ত গভীর হলে মা-বাবা ঠোঁট দিয়ে ঠেলে ওদের গর্ত থেকে বের করে দেয়। বালিহাঁসের বাচ্চারা ভীষণ দুষ্টু।

লেখকঃ আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।