লাল মাছরাঙা বিরল আবাসিক পাখি। সুন্দরবন ছাড়া দেশের অন্য কোথাও দেখা মেলে না। নিকট প্রতিবেশী ভারতের সিকিম, আসাম, নাগাল্যান্ড, মণিপুর ও পশ্চিমবঙ্গে পাখিটির বিচরণ রয়েছে। এ ছাড়া নেপাল, ভুটান, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, লাওস, চীন, জাপান, কোরিয়া, তাইওয়ান, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন ও ইন্দোনেশিয়ায় এর সন্ধান মেলে। বিশ্বে বিপদমুক্ত হলেও বাংলাদেশে লাল মাছরাঙা সংকটাপন্ন। দেশের বন্য প্রাণী আইনে এই প্রজাতি সংরক্ষিত।
বাংলাদেশের আবাসিক মাছরাঙাদের মধ্যে প্রায় ১০ প্রজাতি বাস করে সুন্দরবনে। নিকট প্রজাতির অন্য পাখিদের চেয়ে একটু ব্যতিক্রমী স্বভাব লক্ষ করা যায় এদের মাঝে। এরা পানি ও কাদার ওপর অংশের শিকার ধরতে পারে। শিকারের আনাগোনা দৃষ্টিতে এলে দ্রুত ডানা ঝাপটে নিচে নেমে আসে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এরা একা বিচরণ করে। জোড়ায় জোড়ায়ও দেখা যায়। বিচরণরত অবস্থায় কাছেপিঠে থাকলে একে অন্যের সঙ্গে ডেকে ভাবের আদান-প্রদান করে। ভয় পেলে কম্পিত সুরে ডাকে- ‘টিটিটিটিটি’। মাঝে মাঝে ‘কুয়িররর-র-র-র-র’ সুরে গান গায়। মনোহর না হলেও সুরটা শুনতে মন্দ নয়। মন্দ নয় দেখতেও। তবে এদের দেখা পাওয়া যায় না সহজে। দেখা পাওয়ার চেয়ে ডাকটা কানে আসে বেশি। সাধারণত সুন্দরবনের ভেতরে ছোট নদী বা খালপাড়ের গাছের ডালে বসে শিকার খোঁজে।
পাখিটির বাংলা নামঃ লাল মাছরাঙা, ইংরেজি নামঃ রাডি কিংফিশার, (Ruddy kingfisher) | আর বৈজ্ঞানিক নামঃ হালসিয়ন কোরোমান্ডা, (Halcyon coromanda), গোত্রের নাম ‘হালসিওনিদি’। অঞ্চলভেদে এরা ‘রাঙা মাছরাঙা ও লালচে মাছরাঙা’ নামেও পরিচিত |
আরো পড়ুন…
•বাদামি মাছরাঙা
•মেঘহও মাছরাঙা
•ঝুঁটিয়াল মাছরাঙা
•কালোটুপি মাছরাঙা
•ব্লাইথের ছোট মাছরাঙা
•ধলাগলা মাছরাঙা
•নীলকান মাছরাঙা
•ছোট মাছরাঙা
•পাকড়া মাছরাঙা
লাল মাছরাঙা লম্বায় ২৫ থেকে ২৬ সেন্টিমিটার (ঠোঁট থেকে লেজের শেষ প্রান্ত পর্যন্ত) হয়ে থাকে। দেহজুড়ে রয়েছে নানা রঙের বাহার। মাথার রং উজ্জ্বল লাল তামাটে। ঘাড় ও পিঠের ওপরের অংশ লালচে বাদামি। পিঠের মাঝখান থেকে লেজের প্রান্ত পর্যন্ত ফিকে নীলচে-বেগুনি। গলার নিচ থেকে লেজের কাছাকাছি পর্যন্ত ফিকে লালচে। লেজের তলা সাদা। ঠোঁটের গোড়া প্রবাল লাল, ডগা গোলাপি লাল। পা ও পায়ের পাতা সিঁদুরে লাল। চোখের তারা গাঢ় বাদামি। স্ত্রী-পুরুষ দেখতে একই রকম। তবে অপ্রাপ্তবয়স্কদের রঙে পার্থক্য রয়েছে। ওদের কোমর থেকে লেজের ওপর পর্যন্ত গাঢ় নীল। গলা ও তলপেটের চারদিকে কালো বেড়।
প্রধানত মৎস্যভুক পাখি এরা। এ ছাড়া ছোট কাঁকড়া, ফড়িং ইত্যাদি শিকার করে। প্রজনন সময় মার্চ থেকে এপ্রিল। ডিম পাড়ে পাঁচ থেকে ছয়টি। বাসা বাঁধে গাছের প্রাকৃতিক কোটরে অথবা মাটির খাড়া দেয়ালের গর্তে। মাটির গর্ত নিজেরাই খোঁড়ে। গর্ত চওড়ায় পাঁচ সেন্টিমিটার এবং দৈর্ঘ্যে ৫০ থেকে ১০০ সেন্টিমিটার হয়ে থাকে।
লেখকঃ আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।