জলপিপি | Bronze Winged Jacana | Metopidius indicus

1816
Bronze-Winged-Jacana
জলপিপি | ছবি: ইন্টারনেট

স্থানীয় প্রজাতির পাখি। সুলভ দর্শন। এক সময় গ্রামের দিঘি কিংবা বিল-ঝিলে এদের প্রচুর দেখা যেত। শিকারিদের অত্যাচারে গ্রামীণ জনপদ থেকে বিতাড়িত হয়ে এরা এখন হাওর-বাঁওড়ে আশ্রয় নিয়েছে। জানা যায়, সত্তর দশকেও ঢাকার চারপাশের জলাশয়ে এদের প্রচুর বিচরণ ছিল। বর্তমানে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার জলাশয়ে ছোট ছোট দলে দেখা যায়।

ডাহুকের মতো গড়ন হলেও বেশ পার্থক্য রয়েছে চেহারায়। পা তুলনামূলক লম্বা, পায়ের আঙুল অস্বাভাবিক লম্বা। অনেকটা মাকড়সার পায়ের মতো দেখায়। যার ফলে এরা জলাশয়ের ভাসমান পাতার ওপর ভর দিয়ে দ্রুত বেগে দৌড়াতে পারে, যা অন্য প্রজাতির জলচর পাখির পক্ষে সম্ভব নয়। সে তুলনায় খুব বেশি উড়তে পারে না। ওড়ার সময় পা ঝুলিয়ে এবং গলা সামনে বাড়িয়ে ওড়ে। বেশিরভাগ জোড়ায় জোড়ায় বিচরণ করে। মিলন ঋতুতে ডাকাডাকি করে বেশি। প্রহরে প্রহরে ‘পি-পি-পি-পি-পি-’ সুরে ডেকে ওঠে। তাই এদের নামকরণের শেষ অক্ষরের সঙ্গে নিজস্ব সুরের ‘পি-পি’ শব্দটি যোগ হয়েছে। অনেক সময় ‘সিইক-সিইক’ সুরেও ডাকে। ডাহুকের মতো এদের সুরে তাল-লয় নেই। খানিকটা কর্কশ। পাখিটা দেশে অধিক পরিচিত নয়, যেমনটি ডাহুক। স্থানীয় লোকের কাছে ‘পিপি’ পাখি নামে পরিচিত এরা।

পাখির বাংলা নামঃ জলপিপি, ইংরেজি নামঃ ব্রোঞ্জ উইংড জাকানা, (Bronze Winged Jacana), বৈজ্ঞানিক নামঃ মেটোপিডিয়াস ইন্ডিকাস, (Metopidius indicus), গোত্রের নামঃ জাকানিদি । এরা ‘দলপিপি’ নামেও পরিচিত।

লম্বায় পুরুষ পাখি ২৯ সেন্টিমিটার, স্ত্রী পাখি ৩২ সেন্টিমিটার। মাথা, ঘাড়, গলা, বুক উজ্জ্বল নীলাভ-কালো। চোখের ওপরের দিক থেকে চওড়া টান ঘাড়ে গিয়ে ঠেকেছে। পিঠ এবং ডানা সবুজাভ-ব্রোঞ্জ। ওড়ার পালক কালচে-বাদামি। লেজ খাটো, পাটকিলে লাল। ঠোঁট সবুজাভ-হলুদ। ঠোঁটের গোড়ায় সামান্য লাল ছোপের সঙ্গে সিসে-লাল বর্মদ্বারা আচ্ছাদিত, যা কপাল পর্যন্ত ঠেকেছে। লম্বা পা, ময়লা-সবুজ বর্ণ। স্ত্রী-পুরুষ পাখি দেখতে একই রকম।

প্রধান খাবারঃ জলজ পোকামাকড়। এ ছাড়াও ঘাসবীজ, জলজ উদ্ভিদের কচিপাতা খেতে দেখা যায়। প্রজনন সময় জুন থেকে আগস্ট। বাসা বাঁধে ভাসমান জলজ উদ্ভিদের ওপর পানা বা ঘাসপাতা দিয়ে। ডিম পাড়ে ৪-৬টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৮-২০ দিন।

লেখকঃ আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।