ছোট ডুবুরি | Little Grebe | Tachybaptus ruficollis

678
ছোট ডুবুরি
ছোট ডুবুরি | ছবি: ইন্টারনেট

জলচর পাখি ছোট ডুবুরি । বিচরণ স্বাদুজলে। স্থানীয় প্রজাতির হলেও আজকাল অসুলভ দর্শন। তিন দশক আগেও সুলভ দর্শন ছিল। দেশের অধিকাংশ স্থানে এদের দেখা যেত তখন। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের বড় জলাশয়গুলোতে বিচরণ ছিল ব্যাপক। ছোট অথবা মাঝারি দলে কিংবা জোড়ায় জোড়ায়ও দেখা যেত। বর্তমানে তেমন একটা নজরে পড়ে না। এরা সুযোগ পেলে নির্বিঘ্নে সাঁতরে বেড়ায়। ঘন ঘন ডুবসাঁতার দিয়ে জলাশয় মাতিয়ে রাখে। জনমানবের সাড়া পেলে মুহূর্তে চুপসে যায়।

নিরাপদবোধ মনে না হলে জলাশয়ের ত্রিসীমানায় ঘেঁষে না। খুব হুঁশিয়ারি পাখি, ভীতুও সাংঘাতিক। এরা এতই হুঁশিয়ারি যে, ডিমে তা দেয়া থেকে উঠে যাওয়ার সময় ডিমের ওপর আগাছা দিয়ে ঢেকে রাখে। ফিরে এসে আগাছা সরিয়ে পুনরায় ডিমে তা দেয়। যেখানে বাসা বাঁধে সেখানে ডুবসাঁতার দিয়ে পৌঁছে। এদের গড়নও আজব। লেজহীন। হাঁস আকৃতির হলেও এ পাখির ঠোঁট চেপ্টা নয় বরং সূচালো। ক্ষুদ্রাকৃতির ঠোঁটটি মাঝে মাঝে পিঠের পালকের ভেতর ঢুকিয়ে রেখে জলে ভেসে বেড়ায়, তখন দূর থেকে মনে হয় বুঝি কোনো ফুলের গুচ্ছ জলে ভাসছে। মন প্রফুল্ল থাকলে ‘ক্লিক ক্লিক এবং ট্রিলিলি ট্রিলিলি’ সুরে ডাকে। সুর বেশ মিষ্টি। পারতপক্ষে ডাঙায় ওঠে না, অপ্রয়োজনে ওড়াউড়িও করে না। জলের ওপরের শিকারের চেয়ে জলের তলের শিকার এদের পছন্দ। অর্থাৎ ডুবিয়ে শিকার ধরতে পছন্দ করে, ভাসমান শিকারের প্রতি লোভ নেই বললেই চলে।

পাখির বাংলা নামঃ ছোট ডুবুরি, ইংরেজি নামঃ লিটল্ গ্রিব, (Little Grebe), বৈজ্ঞানিক নামঃ টাকিবাপটাস রুফিকলিস, (Tachybaptus ruficollis), গোত্রের নামঃ পোডিসিপেটিদি ।

আরো পড়ুন…
•লালগলা ডুবুরি •কালাঘাড় ডুবুরি •বড় খোঁপাডুবুরি

লম্বায় ২৩-২৯ সেন্টিমিটার। মাথা গাঢ় বাদামি। গলা ও ঘাড়ের দু’পাশ বাদামি। দেহের ওপরের দিকটা গাঢ় বাদামি। ডানায় রয়েছে একটা সাদা ছোপ। সেটি শুধু ওড়ার সময় নজরে পড়ে। লেজ একেবারেই খাটো। লেজের জায়গাটা ফোলানো-ফাঁপানো থাকে। দেহের নিচের দিকটা ধূসর-সাদা। পালকগুলো রেশমি, নরম। ঠোঁট ছোট সূচালো, কালচে-হলুদাভ। পা সবজেটে-কালো। নখ চওড়া এবং চেপ্টা। প্রজনন মৌসুমে রং বদলায়। স্ত্রী-পুরুষ পাখি দেখতে একই রকম।

প্রধান খাবারঃ ছোট মাছ। এ ছাড়াও ছোট ব্যাঙ, জলজ পোকামাকড় শিকার করে। প্রজনন সময় জুলাই থেকে আগস্ট। বাসা বাঁধে ভাসমান জলজ ঝোপের ভেতর। ঝোপটি যেন ভেসে না যায় তার জন্য স্থায়ী আগাছা বা ঝোপের সঙ্গে বেঁধে রাখে বাসাটি। ডিম পাড়ে কয়েকদিনের ব্যবধানে। ডিমের সংখ্যা ৫-৭টি।

লেখকঃ আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামিস্ট ও বন্যপ্রাণী বিশারদ।