পান্তামুখী হাঁস | Northern shoveler | Anas clypeata

365
পান্তামুখী হাঁস
পান্তামুখী হাঁস | ছবি: ইন্টারনেট

পান্তামুখী হাঁস উত্তর এশিয়ার শীতপ্রধান দেশের বাসিন্দা এ পাখি। প্রচণ্ড শীতে পরিযায়ী হয়ে আসে আমাদের দেশে। সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে দেশের হাওর-বাঁওড় বা নদীর মোহনায় এসে উপস্থিত হয়। বিদায় নেয় মার্চের মধ্যেই। তখন ওদের প্রজনন সময় ঘনিয়ে আসে। আমাদের দেশে এসে বেশিরভাগই বিচরণ করে কর্দমাক্ত এলাকায়। জোড়ায় কিংবা ছোট দলে মিলেমিশে শিকারে বের হয়। পরিযায়ী অন্য হাঁসের সঙ্গেও রয়েছে দারুণ সখ্য। সাঁতারে খুব দক্ষ। জলের তলের খাবারের প্রতি ওদের লোভ নেই। অর্থাৎ মাছ, গুগলি ইত্যাদির প্রতি লোভ নেই বললেই চলে। জলের উপরিভাগের খাবার খুব পছন্দ। যেমন : শ্যাওলা, পানা ইত্যাদি। পারতপক্ষে খুব একটা ডাকাডাকি করে না।

পুরুষ পাখি বেশিরভাগ সময় চুপচাপ কাটিয়ে দিলেও মাঝেমধ্যে স্ত্রী পাখি নিুস্বরে আওয়াজ করে। এদের ঠোঁট বেশ আকর্ষণীয়, অদ্ভুত গড়নের। অনেকটাই হেঁসেলের খুন্তের মতো দেখায়। পুরুষ পাখির সৌন্দর্য উপভোগ করার মতো। স্ত্রী পাখি অনেকটাই ম্লান, দেখতে গৃহপালিত পাতিহাঁসের মতো। প্রথম দেখায় পাতিহাঁস ভেবে ভুলও করেছি। দুয়ের রঙ-রূপে এতই ব্যবধান যে, ভিন্ন গোত্রের ভাবাটাই স্বাভাবিক। এদের সম্পর্কে পূর্বধারণা না থাকলে সাধারণ পাখি দেখিয়েরা বিভ্রান্তিতে পড়ে যাবেন।

বাংলা নামঃ পান্তামুখী হাঁস, ইংরেজি নামঃ নর্দান শোভেলার, (Northern shoveler)বৈজ্ঞানিক নামঃ আনাস ক্লাপিয়েটা, (Anas clypeata), গোত্রের নামঃ আনাটিদি । এরা খুন্তে হাঁস নামেও পরিচিত।

আরো পড়ুন…
•সুন্দরী হাঁস •বৈকাল তিলিহাঁস •ফুলুরি হাঁস •বড় সাদাকপাল রাজহাঁস
•সরু ঠোঁট ডুবরি হাঁস •ঝুঁটি হাঁস •নাকতা হাঁস •পিয়ং হাঁস
•সাদা হাঁস •নীলশির হাঁস •পাতারি হাঁস •লালশির হাঁস
•ভাদি হাঁস •মরচেরং ভূতিহাঁস •বালিহাঁস •উত্তুরে ল্যাঞ্জাহাঁস

লম্বায় ৪৪-৫২ সেন্টিমিটার। ঠোঁট লম্বা, অগ্রভাগ খুন্তের মতো চেপ্টা। চোখ হলুদ। পুরুষ পাখির মাথা, গলা উজ্জ্বল হরিৎবর্ণ। পিঠ ধূসর-পিঙ্গল। লেজ পিঙ্গল। পার্শ্বদেশ তামাটে, লেজের নিচের পালক কালো। বুক সাদা। পেট গাঢ় খয়েরি। স্ত্রী পাখির বর্ণে বৈচিত্রতা নেই। রঙ পিঙ্গল, ডানার অল্পকিছু পালক নীলাভ-ধূসর। শরীরের আঁশ ভাবযুক্ত। পুরুষ পাখির মতো চোখ হলুদ নয়। তবে ঠোঁটের গড়ন পুরুষ পাখির মতোই চেপ্টা।

প্রধান খাবারঃ শ্যাওলা, শস্য বীজ ইত্যাদি। মাঝেমধ্যে ছোট মাছ খেতে দেখা যায়, তবে খুব একটা নয়, ঠেকায় পড়লে খায়। প্রজনন সময় এপ্রিল থেকে জুন। বাসা বাঁধে উত্তর এশিয়ার পার্বত্য অঞ্চলে। জলাভূমির কাছাকাছি স্যাঁতস্যাঁতে মাটিতে ছোট ঘাস-লতা বিছিয়ে বাসা বানায়। ডিম পাড়ে ৯-১২টি। স্ত্রী পাখি একাই ডিমে তা দেয়। ডিম ফুটতে সময় লাগে ২৩-২৮ দিন। শাবক স্বাবলম্বী হয় ৫২-৬৬ দিনে।

লেখকঃ আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।