উদয়ি ধলা চোখ | Oriental White Eye | Zosterops palpebrosus

329
Oriental-White-Eye
উদয়ি ধলা চোখ | ছবি: তৌহিদ পারভেজ বিপ্লব

বছর দুয়েক আগে কুমিল্লার ‘বার্ডস’-এ গিয়েছি। নানা জাতের দুষ্প্রাপ্য গাছ-গাছালির সমাহার ওখানে। পরিকল্পিত উদ্যান। বলা যায় দেখার মতো। সহকর্মীরা উদ্যানের ভেতর হুড়মুড়িয়ে ঢুকে পড়েছেন। আমি খুব বেশি ভেতরে প্রবেশ করিনি। উদ্যানের ভেতরের পাকা রাস্তার ধার ঘেঁষে মৃদু পায়চারি করছি। মাঝেমধ্যে দুর্লভ গাছগুলোর শাখা প্রশাখায় নজর বুলিয়ে কিছু একটা খোঁজার চেষ্টা করছি। কাজ তো শুধু দু’টিই। বন আর বন্যপ্রাণী সম্পর্কে কিছু জেনে নেয়া। বার্ডসে ঢুকে বেশ কিছু পরিচিত পাখি নজরে পড়েছে। যাদের সঙ্গে আমাদের প্রতিনিয়তই সাক্ষাৎ হয় এমন ধরনের পাখিই বেশি ওখানে।

শুধু সোনালু গাছে বসা একটি পাখিই দেখেছি, যাকে আর কখনো কোথাও দেখিছি বলে মনে হয়নি। সোনালু ফুলের সঙ্গে মিশে একাকার হয়ে গেছে পাখিটি। ফলে খুঁজে পেতে কষ্ট হয়েছে। পাখিটি দেখতে ভারি চমৎকার। ওর উড়ে যাওয়ার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত আমি সেদিকে তাকিয়ে রয়েছি। অপরূপ রূপের অধিকারী পাখিটি উড়ে গেলেও স্মৃতিতে গেঁথে রয়েছে ওর দুটি চোখ। মনে হয়েছ সাদা চশমা পরেছে পাখিটা। চশমার ফ্রেমের ভেতর কুতকুতে দুটি চোখ প্রসারিত করে রেখেছে।

পাখিটির ইংরেজি নামঃ ওরিয়েন্টাল হোয়াইট আই, (Oriental White Eye) বৈজ্ঞানিক নামঃ জসটেরোপস্ পালপেব্রোসাস, (Zosterops palpebrosus) গোত্র: ‘জোসটেরোপিদি’| বাংলা নামঃ অনেক। বাবুনাই, চশমা পাখি, সিত নয়ন, শ্বেতার্ফী, সাদা চোখ ইত্যাদি। আমাদের দেশের পাখি বিশারদরা নাম রেখেছেন ‘উদয়ি ধলা চোখ’।

Oriental-White-Eye
উদয়ি ধলা চোখ | ছবি: তৌহিদ পারভেজ বিপ্লব

বাবুনাই এ দেশের ক্ষুদ্রতম পাখি ফুলঝুরির চেয়ে আড়াই সেন্টিমিটার বড়। এটি লম্বায় ১০ সেন্টিমিটার। গায়ের বর্ণ সবুজাভ সোনালি হলুদ। অনেক সময় উজ্জ্বল হলুদও দেখায়। চোখের চারপাশে গোলাকার সাদা বলয়। সরু কালো ঠোঁট নিচ দিকে সামান্য বাঁকানো। চিবুক ও গলা উজ্জ্বল হলুদ। পেটের দিকের পালক সাদাটে ধূসর। পা কালচে। স্ত্রী-পুরুষ পাখি দেখতে একই রকম। খাবার হিসাবে এদের প্রিয় পোকমাকড়, ফুলের মধু, ছোট বুনোফল।

এ পাখি আমৃত্যু গাছের শাখায় বিচরণ করে। জীবদ্দশায় মাটিতে নামে না। মধুপান করে পানির পিপাসা মেটায়। অথবা বৃষ্টির পানি গাছের গায়ে লেগে থাকলে তা খেয়ে নেয়। এরা নির্জনতাপ্রিয়। একাকি চলাফেরা করে। প্রজনন সময় হলে জোড়া বাঁধে। এ সময় বেশ মিষ্টি সুরে গান গায় পুরুষ পাখিটি। গান গাওয়ার ঢং বেশ চমকপ্রদ। প্রথমে নিচুস্বরে গায়। পর্যায়ক্রমে স্বর বাড়িয়ে পুনরায় নিুস্বরে নিয়ে আসে। দীর্ঘসুরে গান গাইতে পারে না। দম ছোট এবং কণ্ঠস্বর চাপা। বড়জোর ৮-১০ সেকেন্ড দম আটকে রাখতে পরে। ‘সিসি.. টিসির..’ শব্দে ডাকাডাকি করে। বাংলাদেশের সর্বত্রই কমবেশি নজরে পড়ে।

এপ্রিল থেকে জুন এদের প্রজনন সময়। বাসা বাঁধতে সময় নেয় ৩-৪ দিন। ঘন পাতার আড়ালে বাসা বাঁধে। বাসাটা ঝুলন্ত। ডিম পাড়ে ২-৩টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে মাত্র ১০-১২ দিন। বাংলাদেশের আর কোনো পাখির ডিম এত অল্প সময়ে ফুটতে দেখা যায় না। বাবুনাইদের বাচ্চা স্বাবলম্বী হতে সময় নেয় ৩০-৩৫ দিন।

লেখকঃ আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।