‘পুউ উ উ-পিউউ-উস’ মিষ্টি সুরটা কানে বাজতেই ভাতঘুমটা ভেঙে গেছে। আহ, কী মধুর সুর! নিজ ঘরঘেঁষা আম শাখা থেকে সুরটা ভেসে আসছে। পরিচিত সুর। পাখিটা চিনি। নামও জানি। ওকে এক মুহূর্তে দেখতে পাচ্ছি না। লুকিয়ে গান গাচ্ছে। ওদের স্বভাবটাই এমন। লুকিয়ে-চুরিয়ে গান গাওয়া। জানালার গ্রিল ভেদ করে দৃষ্টিটা বাইরে চলে গেছে ইতিমধ্যে। পাতার ফাঁক-ফোকরে খুঁজছি পাখিটাকে। দেখা পেলে ক্লিক করার সুযোগ পাব। ক্যামেরা, দুরবিন, টেপ রেকর্ডার, নোটশিট, রঙ পেন্সিল সব সময় হাতের নাগালে রাখি। খুঁজে যেন হয়রান হতে না হয়। পাখি দেখিয়েদের এ ক’টা জিনিস কাছে রাখা প্রয়োজন। কারণ ঘরের আশপাশের পাখিগুলোকে ক্যামেরাবন্দি করতে গেলে এ ছাড়া বিকল্প নেই।
বলে রাখা ভালো, পাখিরা ছবি তুলতে আপনাকে সময় দেবে না। আপনার জন্য আলাদা পোজও দেবে না। ওর পোজে সন্তুষ্ট হয়েই আপনার ক্যামেরা অন করতে হবে। সেটা যত দ্রুত সম্ভব করতে হবে, পারলে দূর থেকে ক্লিক করতে করতে এগোতে হবে। যাতে উড়ে গেলেও ওর স্মৃতিটা অন্তত থেকে যায় আপনার ক্যামেরায়। মিনিট পাঁচেক ধরে খুঁজে অবশেষে পাখিটাকে নজরবন্দি করতে সক্ষম হয়েছি। ততক্ষণে অবশ্য ওর মিষ্টি সুর উধাও। মিনিট খানেকের মাথায় পাখিটাও উধাও। চোখের সামনে থেকে পাখিটা উধাও হলেও আমার মনে গেঁথে রয়েছে দীর্ঘদিন। কারণও আছে অবশ্য। যে পাখিদের নিয়ে এত গান এবং এত এত সাহিত্য রচনা হয়েছে, তাকে কি ইচ্ছে করলেই ভোলা যায়! যে পাখির কথা শুনলেন এতক্ষণ, তার
বাংলা নামঃ শ্যামা, ইংরেজি নামঃ White rumped Shama | বৈজ্ঞানিক নামঃ Copsychus malabaricus |
লম্বায় শ্যামা ২৮-৩০ সেন্টিমিটার (লেজের প্রান্ত থেকে ঠোঁটের অগ্রভাগ পর্যন্ত)। এদের শরীরের মোট ৬০ ভাগজুড়ে লেজের অংশ। মাথা, গলা, বুক, পিঠ, ডানা কুচকুচে কালো। পুরুষ পাখির পিঠ ও লেজের মধ্যাংশ ধবধবে সাদা। পেট উজ্জ্বল বাদামি-পাটকিলে। লেজের পালকের উপরিভাগ কালো, নিম্নাংশের বেশির ভাগ সাদা, অগ্রভাগ কালো ও হাল্কা বাদামি। লেজের পালকের পাশেই রয়েছে সাদার টান। ঠোঁট হালকা কালো, পা হালকা গোলাপি। চোখের মণি হালকা বাদামি। স্ত্রী-পুরুষ পাখি দেখতে একই রকম। শ্যামাকে অনেকে দোয়েল বলে ভুল করেন। এদের লম্বা লেজটা না থাকলে এ ভুলটা আরও বেশি বোধ হতো। শ্যামা গায়ক পাখি। কণ্ঠটা ভীষণ মধুর। এরা অন্য পাখিদের কণ্ঠ নকল করতে ওস্তাদ। একেবারে হুবহু নকল করতে পারে। গভীর জঙ্গল এদের পছন্দ। গোসল করে নিয়মিত। বেশ ঝকঝকে দেখায় তাই। রোদ এদের শত্রু। যতটা সম্ভব ছায়া-শীতল স্থানে থাকতে পছন্দ করে।
প্রধান খাবারঃ শ্যামা পতঙ্গভুক পাখি। মাটির পতঙ্গ ওদের বেশি পছন্দ। মাটির ওপর পড়ে থাকা পাতা উল্টিয়ে খাবার খোঁজে। এদের প্রজনন সময় এপ্রিল থেকে জুন। সময়টা এলে পুরুষ পাখি অনবরত মিষ্টি সুরে গান গাইতে থাকে। মিলন শেষে গাছের কোটরে বাসা বানায়। কোটর স্বল্পতার কারণে মাটির কাছাকাছি পেয়ালা আকৃতির বাসা বানায়। বাসার ভেতর ঘাস, লতাপাতা দিয়ে নরম গদি তৈরি করে ডিম পাড়ে। ডিমের সংখ্যা ৩-৪টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৩-১৫ দিন।
লেখকঃ আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামিস্ট ও বন্যপ্রাণী বিশারদ।