কালোপিঠ চেরালেজি বাংলাদেশের স্থায়ী বাসিন্দা এরা। দেখতে খুবই সুন্দর। চেহারাটাও বেশ মায়াবী। আদুরে গড়ন। দূর থেকে অনেক সময় দোয়েল পাখির মতো মনে হলেও আসলে তা নয়। তবে দোয়েলের নিকটাত্তিয় এরা। গোত্রভেদেও একই। লম্বা লেজটা কেটে ফেললে সাধারণ পাখি দেখিয়েরা তালগোল পাকিয়ে ফেলবেন বোধকরি। তাদের কাছে তখন দোয়েল পাখিই মনে হবে। অবশ্য এ কথা পাখি বিশেষজ্ঞদের জন্য প্রযোজ্য নয়।
এমন সুন্দর পাখিদের বিস্তৃতি শুধু আমাদের দেশেই নয়, যথাক্রমে ভারত, ভুটান, নেপাল, মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডের বন ও পাহাড়ি অঞ্চলে। আমাদের দেশে যেখানে সেখানে নজরে পড়ে না। তবে চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সিলেটের বনাঞ্চলসহ পাহাড়ি ছড়ায় এদের দেখা যায় বেশি। এরা পাহাড়ি ছড়ার কাছে স্যাঁতসেঁতে স্থানে শিকার খোঁজে। একেবারে জলার ধারঘেঁষে চরে বেড়ালেও জলে পা ভেজায় না খুব একটা। এরা পছন্দ করে একাকী হাঁটতে এবং শিকার খুঁজতে। কালেভদ্রে স্ত্রী-পুরুষ পাখি একত্রিত হলেও তারা পাশাপাশি কিংবা গা-ঘেঁষে চলাফেরা করে না। খানিকটা দূরত্ব বজায় রেখে হাঁটে। হেঁটে বেড়ানোর সময় এদের লেজটা ভূমি থেকে উপরে ওঠানামা করে বিশেষ ভঙ্গিতে। দৃশ্যটি দেখার মতোই বটে।
আরো পড়ুন…
•সাদামুকুট চেরালেজি
পাখিটাকে প্রথম দেখেছি সিলেটের মাধবকুণ্ডে। ঝরনার পাদদেশ থেকে সৃষ্ট ছড়ার কিনারে হেঁটে বেড়াতে দেখেছি ওকে। দেখেছি পাথরের ওপর দাঁড়িয়ে লেজ নাড়তে। পাখিটা দেখে ভীষণ অভিভূত হয়েছি। যেমন অভিভূত হয়েছি ওর রূপ-লাবণ্যে, তেমনি আকৃষ্ট হয়েছি ওর হাঁটাচলার ভঙ্গিতে। পাখিটার শরীরে বহুবিধ বর্ণের বিন্যাস না থাকলেও সামান্য সাদা-কালো বর্ণই ওকে অপরূপ করে তুলেছে। আমি কিন্তু প্রথম দেখায় ওকে চিনতে পারিনি। ক্যামেরাবন্দি করে ঢাকায় এসে একজন পাখিবিশারদের শরণাপন্ন হলে তিনি আমাকে এ পাখি সম্পর্কে নানা তথ্য জানান। বর্তমানে এ পাখি আমাদের দেশে খুব ভালো অবস্থায় নেই। অবাধ বন-জঙ্গল বিনাশের কারণে এরা অস্তিত্ব সংকটের সম্মুখীন রয়েছে।
পাখির বাংলা নামঃ: কালোপিঠ চেরালেজি, ইংরেজি নামঃ ব্ল্যাক-ব্যাকড ফর্কটেইল, (Black-backed Forktail), বৈজ্ঞানিক নামঃ Enicurus immaculatus, গোত্রের নামঃ মুস্কিকাপিদি, উপগোত্রের নামঃ টার্ডিনি ।
এরা লম্বায় লেজসহ ২৮ সেন্টিমিটার। এদের লেজ শরীরের তুলনায় বেশ বড় এবং লেজের প্রান্তটা চেরা। লেজের পালক কালোর ওপর সাদা ছিট। লেজের পাশ এবং অগ্রভাগ ধবধবে সাদা। কপালে চওড়া সাদা রেখা। মাথা কালো। ঘাড় থেকে পিঠ পর্যন্ত স্লেট-কালো বর্ণের। ডানা কুচকুচে কালোর ওপর সাদা টান। গলার সাদা বর্ণটা দেহের নিুাংশে গিয়ে ঠেকেছে। চঞ্চু কালো। পা, আঙুল পীত বর্ণের। কালোপিঠ চেরালেজিদের প্রিয় খাবার কীটপতঙ্গ। ভূমিজ কীটের চেয়ে জলজ কীটপতঙ্গ এদের বেশি পছন্দ।
লেখকঃ আলম শাইন। কথা সাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।