কালোমাথা হলুদ বুলবুল খুব কমই দেখা যায় আমাদের দেশে, যদিও ওরা দেশীয় পাখি। পাহাড়ি অঞ্চলে যৎসামান্য বাস করলেও যত্রতত্র দেখা মেলে না পাহাড়েই। মূলত চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম, গারো পাহাড়ে এদের বাস। মাঝেমধ্যে চলে আসে লোকালয়েও। খুব বেশি নয় অবশ্য। খাবার-দাবারের সংকটবোধ করলে এ পাগলামিটা মাথাচাড়া দেয়। ঘুরে ফিরে আবার চলেও যায় পাহাড়ে। পাখি দেখিয়েদের সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় তাই খানিকটা। কেউ বলেন, ‘ওটাকে দেখিছি লোকালয়ে’। আবার কেউ জানান, ‘দেখিছি বাছাধনকে অমুক পাহাড়ে’। তর্ক যেন লেগেই থাকে পাখিটাকে নিয়ে।
তবে যে যাই বলুক না কেন, এ প্রজাতির সাক্ষাৎ পাওয়া সত্যিই সাধনার ব্যাপার। দেখতে হলে ধৈর্যের আশ্রয় নিতে হয় অনেকটা। সাধনার পর ওর সাক্ষাৎ পেয়ে দর্শনার্থীরা তাদের কষ্টের কথা ভুলে যান নিমিষেই। কারণ আর কিছু নয়, পাখিটার চোখের মণি। বেশ আকর্ষণীয়। আমি দেখেছি পার্বত্য চট্টগ্রামে। পাখিটার চোখ দেখে অভিভূত হয়ে গেছি। খানিকটা সময় লাগিয়ে ওকে পর্যবেক্ষণ করেছি। টুকিটাকি যা পেরেছি নোটখাতায় টুকে নিয়েছি ঝটপট।
এ পাখির বাংলা নামঃ কালোমাথা হলুদ বুলবুল । ইংরেজি নামঃ ব্ল্যাক হেডেড ইয়েলো বুলবুল, (Black-headed Yellow Bulbul)’, বৈজ্ঞানিক নামঃ পিকনোনোটাস মেলানিকটেরাস, (Pycnonotus melanicterus) গোত্রের নামঃ পিকনোনোটিদি ।
আরো পড়ুন…
•কালো ধূসর বুলবুলি
•হলুদাভ জলপাই বুলবুলি
•সিপাহী বুলবুল
•বুলবুলি
•কালো বুলবুল
লম্বায় ১৮-২০ সেন্টিমিটার। মাথায় চমৎকার কালো ঝুঁটি। ঝুঁটি উল্টোভাবে খাড়া। মাথা, ঘাড়, ঠোঁট কালো। গলার নিচে টকটকে লাল। বুক, পেট উজ্জ্বল হলুদ। পিঠের ওপরটা লালচে সবুজ। ডানার ওপরটা হাল্কা হলুদাভ সবুজ। লেজের তলা ময়লা সাদা। চোখের মণি কালো। মণির চারপাশে হলদেটে বলয়। ফলে সৌন্দর্যের মাত্রাটা বেড়ে গেছে দ্বিগুণ। স্ত্রী-পুরুষ পাখি দেখতে একই রকম।
আমাদের দেশে পাঁচ ধরনের বুলবুল দেখা যায়। যথাক্রমে : সিপাহি বুলবুল, লালপুচ্ছ বুলবুল, কালো বুলবুল, শাহ বুলবুল, কালো মাথা হলুদ বুলবুল। কালো মাথা হলুদ বুলবুলের গানের গলা ভালো। তবে গায় খুবই কম। এ পাখি বেশ ফূর্তিবাজ, চঞ্চল প্রকৃতির হলেও লাজুক অনেকটাই। অন্য সব বুলবুল মানুষকে ভয় না পেলেও এরা ভয় পায় খুব।
খাদ্য হিসেবে এরা আমিষ নিরামিষ উভয় ধরনের খাবার গ্রহণ করে। তবে ছোট ফল, কচি শসা ইত্যাদি ওদের প্রিয় খাবার। মাঝেমধ্যে পোকামাকড়ও খেয়ে থাকে।
প্রজনন সময় ফেব্রুয়ারি থেকে জুলাই। বাসা পেয়ালা আকৃতির। মাটি থেকে ২০ ফুটের মধ্যে এর বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ২-৪টি। ১৫-১৭ দিনের ভেতর ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়।
লেখকঃ আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।