বাংলাদেশে উত্তরবঙ্গের দ্বার বা রাজধানী বলা হয় বগুড়া জেলা কে। ভৌগলিক অবস্থান থেকে পৃথিবীর মধ্যে ছোট্ট একটি দেশ বাংলাদেশ, ছোট হলেও ইতিহাস ঐতিহ্য সংস্কৃতিতে সমৃদ্ধ আমাদের এ বাংলাদেশ। বাংলাদেশ ৬৪ জেলায় বিভক্ত। আর এ ৬৪ জেলারই জন্মসূত্র ইতিহাস ঐতিহ্য বিদ্যমান। একেক জেলা একেকরকম ভাবে বা অভিনবত্বে সমৃদ্ধ। বিভিন্নভাবে প্রসিদ্ধ। আসুন এক নজরে জেনে নিই বগুড়ার জেলার গুরুত্বপূর্ণ সব তথ্য
বগুড়া – নামটি শুনলেই প্রথমে মনে আসে লোভনীয় দই-মিষ্টির কথা। তবে এটাই বগুড়ার মূল পরিচয় নয়। বগুড়াকে বলা হয় ইতিহাস আর ঐতিহ্যের শহর। বগুড়া জেলা বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের রাজশাহী বিভাগের একটি প্রশাসনিক জেলা। আয়তনের দিক থেকে এটি বাংলাদেশের ষষ্ঠ বৃহত্তম জেলা এবং জনসংখ্যার দিক থেকে পঞ্চম বৃহত্তম জেলা। খ্রিষ্টপূর্ব ৪র্থ শতকে বগুড়া মৌর্য শাসনাধীনে ছিল। মৌর্য এর পরে এ অঞ্চলে চলে আসে গুপ্তযুগ । এরপর শশাংক, হর্ষবর্ধন, যশোবর্ধন পাল, মদন ও সেনরাজ বংশ । ১৩শ শতাব্দীতে, এলাকাটি মুসলিম শাসনের অধীনে আসে। মুসলিম শাসক নাসিরুদ্দিন বগরা খান ১২৭৯ থেকে ১২৮২ সাল পর্যন্ত বাংলার গভর্নর ছিলেন। তার মৃত্যুর পর, তার নামে এলাকাটির নামকরণ করা হয় এবং তখন থেকেই এটি বগুড়া নামে পরিচিত। বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গে এক ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন জনপদ গড়ে উঠেছিল এই বগুড়ায়। প্রাচীন পুণ্ড্র রাজ্যের রাজধানী পুণ্ড্রবর্ধনের বর্তমান নাম মহাস্থানগড়, যা বগুড়া জেলায় অবস্থিত এবং এটি একটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান হিসেবে পরিচিত। বগুড়াকে উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার ও রাজধানী বলা হয়। এছাড়াও বগুড়া শিক্ষানগরী নামে পরিচিত ৷ বগুড়া পৌরসভা বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় পৌরসভা। বর্তমানে বগুড়া সার্ক এর সংস্কৃতি রাজধানী। ৷
বগুড়া জেলা ১২টি উপজেলা নিয়ে গঠিত যথাক্রমে, ১। কাহালু , ২। বগুড়া সদর, ৩। সারিয়াকান্দি, ৪। শাজাহানপুর, ৫। দুপচাচিঁয়া, ৬। আদমদিঘি, ৭। নন্দিগ্রাম, ৮। সোনাতলা, ৯। ধুনট, ১০। গাবতলী, ১১। শেরপুর, ১২। শিবগঞ্জ।
প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ও দর্শনীয় স্থানঃ
➤মহাস্থানগড় ➤গোকুল মেধ (বেহুলার বাসরঘড়) ➤ভাসু বিহার ➤শিলাদেবীর ঘাট ➤গোবিন্দ ভিটা ➤রাজা পরশুরামের বাড়ি ➤জীয়ত কুণ্ড ➤শাহ সুলতান বলখি (রহ.) এর মাজার ➤মহাস্থান প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘর ➤যোগীর ভবণ ➤বিহার ভীমের জাঙ্গাল ➤খেরুয়া মসজিদ ➤নবাব বাড়ি (সাবেক নীল কুঠির) ➤বিজয়াঙ্গন যাদুঘর, বগুড়া সেনানিবাস, শাজাহানপুর (মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক) ➤শহীদ চান্দু ক্রিকেট স্টেডিয়াম ➤পল্লী উন্নয়ন একাডেমী, শেরপুর, ➤বাংলাদেশ মশলা গবেষণা কেন্দ্র, শিবগঞ্জ, ➤মম-ইন (Momo Inn), ঠেঙ্গামারা ➤হোটেল নাজ গার্ডেন, ছিলিমপুর ➤পর্যটন মোটেল, বনানী ➤মম-ইন ইকো পার্ক, ঠেঙ্গামারা।
আরো পড়ুন…
•মহাস্থানগড় : বাংলাদেশের প্রাচীন পুরাকীর্তি
•খেরুয়া মসজিদ : ৪৪০ বছরের প্রাচীন ঐতিহ্য
ঐতিহ্যবাহী উৎসবঃ
- পোড়াদহ মেলাঃ বগুড়ার ঐতিহ্যবাহী মেলার মধ্যে পোড়াদহ মেলা উল্লেখযোগ্য। বগুড়া শহর হতে ১১ কিলোমিটার পূর্বদিকে ইছামতি নদীর তীরে পোড়াদহ নামক স্থানে সন্ন্যাসী পূজা উপলক্ষ্যে প্রতি বছর এ মেলা হয়ে আসছে। পোড়াদহ নামক স্থানে মেলা বসে তাই নাম হয়েছে পোড়াদহ মেলা। কথিত আছে, প্রায় সাড়ে চারশত বছর পূর্বে থেকে সন্ন্যাসী পূজা উপলক্ষ্যে এই মেলা হয়ে আসছে। প্রতিবছর মাঘ মাসের শেষ বুধবারে এই মেলা হয়ে আসছে। মেলার প্রধান আকর্ষণ বড় মাছ আর বড় মিষ্টি। এছাড়াও থাকে নারীদের প্রসাধনী, ছোটদের খেলনা, কাঠ ও স্টিলের আসবাব ও দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি। মেলা প্রধানত একদিনের হলেও উৎসব চলে তিনদিন ব্যাপী। বুধবার মূল মেলার পরদিন বৃহস্পতিবার একই স্থানে এবং একই সাথে আশেপাশের গ্রামে গ্রামে চলে বউ মেলা। যেহেতু অনেক মেয়েরা মূল মেলায় ভিড়ের কারণে যেতে পারে না তাই তাদের জন্যই এই বিশেষ আয়োজন। বউ মেলায় শুধু মেয়েরা প্রবেশ করতে পারে এবং কেনাকাটা করতে পারে।
- কেল্লাপোষী মেলাঃ বগুড়ার শেরপুরে ৪৫৭ বছর পূর্ব থেকে এ মেলা হয়ে আসছে। মেলার তারিখ প্রতিবছর জৈষ্ঠ মাসের দ্বিতীয় রোববার।
যে কারনে বগুড়া জেলা বিখ্যাতঃ
- ইতিহাসঃ বগুড়া বাংলাদেশের প্রাচীনতম শহরগুলির মধ্যে একটি, যার ইতিহাস খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দীতে মহান সম্রাট অশোকের রাজত্বকালের। মৌর্য, গুপ্ত, পাল, সেন এবং মুঘল সহ বহু শতাব্দী ধরে এই জেলাটি বিভিন্ন সাম্রাজ্য ও রাজবংশ দ্বারা শাসিত হয়েছে।
- প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানঃ বগুড়া মহাস্থানগড় সহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের আবাসস্থল, যেটি একসময় প্রাচীন বাংলার অন্যতম প্রধান রাজ্য পুন্ড্রবর্ধনের রাজধানী ছিল। মহাস্থানগড় ইউনেস্কোর একটি বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান এবং এটি বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান।
- প্রাকৃতিক সৌন্দর্যঃ বগুড়া একটি উর্বর সমভূমিতে অবস্থিত এবং পাহাড় ও বনে ঘেরা। মহানন্দা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য, দুধকুমার নদী এবং মহাস্থানগড় পাহাড় সহ এই জেলাটি অনেক সুন্দর প্রাকৃতিক আকর্ষণের আবাসস্থল।
- সংস্কৃতিঃ বগুড়া একটি সমৃদ্ধ ও বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতির আবাসস্থল। এই জেলাটি বাঙালি, আদিবাসী এবং মুসলমান সহ বিভিন্ন জাতিগত গোষ্ঠীর লোকদের বাসস্থান। বগুড়া জাদুঘর এবং বগুড়া জেলা পরিষদ মিলনায়তন সহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের আবাসস্থল।
- অর্থনীতিঃ বগুড়া বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক কেন্দ্র। জেলায় কৃষি, উৎপাদন, এবং পর্যটন সহ অনেক শিল্পের আবাসস্থল। বগুড়া একটি প্রধান পরিবহন কেন্দ্র এবং বগুড়া বিমানবন্দর এবং বগুড়া রেলওয়ে স্টেশনের আবাসস্থল। [তথ্য সুত্র: উইকিপিডিয়া, ইন্টারনেট]