জামুই প্রজাপতি | Blue moon butterfly | Hypolimnas bolina

267
জামুই প্রজাপতি
জামুই প্রজাপতি | ছবিঃ ইন্টারনেট

জামুই প্রজাপতি স্বভাবে ভীষণ অভদ্র, বদমেজাজিও বটে। ধারে কাছে নিজ প্রজাতিসহ অন্য প্রজাতির প্রজাপতিদের সহজে কাছে ভিড়তে দেয় না। এরা বদমেজাজি হলেও দেখতে ভারি সুন্দর। স্ত্রী প্রজাপতির চেয়ে পুরুষটিই বেশি আকর্ষণীয়। দেখা মেলে দেশের সর্বত্রই। ঝোপ-জঙ্গল কিংবা ময়লাযুক্ত স্থানেও বিচরণ রয়েছে এদের। বাংলাদেশ ছাড়াও দেখা মেলে ভারত, নেপাল, মিয়ানমার, চীন, জাপান, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও মাদাগাস্কারে।

বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম তার ‘প্রজাপতি প্রজাপতি’ নামক ছড়ায় লিখেছেন, প্রজাপতি প্রজাপতি/কোথায় পেলে ভাই এমন রঙিন পাখা/টুকটুকে লাল নীল ঝিলিমিলি আঁকাবাঁকা। সত্যিই প্রজাপতিদের পাখা বেশ আকর্ষণীয়। এদের পাখা এতই আকর্ষণীয় যে, দেহের তুলনায় পাখার স্তূতিই বেশি গেয়েছেন কবি-সাহিত্যিকরা। প্রজাপতির দেহের বর্ণনা অবশ্য দেয়ার মতো নয়। কারণ দেহটা আলাদাভাবে দেখলে কিছুটা ঘৃণার উদ্রেক ঘটে। সেটি না ঘটিয়ে প্রজাপতির রূপের বর্ণনা দেয়ার চেষ্টা করছি।

এ প্রজাপতির বাংলা নামঃ জামুই প্রজাপতি, ইংরেজি নামঃ ব্লু মুন বাটারফ্লাই (Blue moon butterfly), বৈজ্ঞানিক নামঃ Hypolimnas bolina |

স্ত্রী-পুরুষের বর্ণে রয়েছে বিস্তর পার্থক্য। দেখলে দুটিকে ভিন্ন প্রজাতির মনে হতে পারে। বাস্তবে অভিন্ন। তবে ডানার বিস্তার সবার সমান, প্রায় ৭৫-৮৫ মিলিমিটার। পুরুষ প্রজাপতি দেখতে বেগুনি বর্ণের মনে হলেও আসলে ওদের পিঠ কালো। ডানায় দেখা যায় উজ্জ্বল বেগুনির ঝিলিক। তা ছাড়া ডানায় ওপরে রয়েছে ডিম্বাকার সাদা বর্ণ, যা উজ্জ্বল নীলে ঘেরা। ডানার ওপরের দিকে রয়েছে সাদা ছোপ। সেখানেও অস্পষ্ট উজ্জ্বল নীলে ঘেরা। সূর্যের আলো ডানায় পড়লে নীল রঙটা ঝলসে ওঠে। দেখতে তখন ভারি চমৎকার দেখায়। স্ত্রী প্রজাপতি পুরুষের তুলনায় কিছুটা ম্লান। গায়ের বর্ণ গাঢ় খয়েরি। ডানার প্রান্তে রয়েছে সাদা-কালোর মিশ্রণের ঢেউ। ফুলের মধুর প্রতি এদের আসক্তি বেশি থাকলেও গাছের কচি পাতা খেতেও দেখা যায় মাঝেমধ্যে। প্রজনন মৌসুমে ২-৫টি ডিম পাড়ে। ডিমের বর্ণ সবুজ ঘাসের মতো। ওদের প্রজননে দারুণভাবে বিঘ্ন ঘটায় গাছ পিঁপড়ারা। পিঁপড়াদের প্রিয় খাবার হচ্ছে প্রজাপতির ডিম। ফলে এদের বংশ বিস্তার আশানুরূপ ঘটে না।

লেখকঃ আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামিস্ট ও বন্যপ্রাণী বিশারদ।