আমরা ছোট বেলায় দেখতাম বক। আর এখন যে ছবিটি দেখছেন সেটি কিন্তু বক নয়, অনেকটা বকের মতো দেখতে হলেও আসলে এটি লালঠেঙ্গি । লাল পা বলে এর নাম রাখা হয়েছে লালঠেঙ্গি। ঠ্যাং- অর্থাৎ পা জোড়া লাল বলেই নাম হয়েছে লালঠেঙ্গি। দেহের তুলনায় পা জোড়া বেঢপ রকমে লম্বা। পাখিটার দিকে তাকালে এর লাল বর্ণের পা জোড়াই প্রথম নজর কাড়ে। সে কারণে এর ‘লালঠেঙ্গি’ নামকরণ নিরর্থক নয়। হঠাৎ দেখলে মনে হয় রণ-পায়ে ভর করে দাঁড়িয়ে আছে ছিপছিপে গড়নের পাখিটা। পা জোড়া বেঢপ সাইজের হলেও পাখিটা দেখতে মন্দ নয়। স্বভাব চরিত্র শান্ত গোছের। মোটেও চালাক-চতুর নয়। চেহারাতেও একটা গোবেচারা গোবেচারা অর্থাৎ বোকা বোকা ভাব। হাওর, বাঁওড়, বিল ইত্যাদি জলাভূমি তাদের বিচরণ ও আবাসের প্রিয় স্থান। এ পাখি উপ-মহাদেশের স্থায়ী বাসিন্দা হলে এ এলাকায় শীতকাল ছাড়া দেখা যায় না।
পাখিটার বাংলা নামঃ লালঠেঙ্গি, ইংরেজী নামঃ ব্ল্যাক উইংগড্ স্টিলট, (Black-winged stilt), বৈজ্ঞানিক নামঃ Himantopus Himantopus | বাংলায় আরো কিছু নাম রয়েছে। যেমন লাল গোরি, লাল পা ডেঙ্গা, রণ-পা ইত্যাদি।
লালঠেঙ্গি লম্বায় ৩৩-৩৬ সেন্টিমিটার। স্ত্রী-পুরুষ দেখতে প্রায় একই রকম। পার্থক্য খুবই সামান্য। পুরুষের ডানা, পিঠ কালো, অন্যসব পালক ধবধবে সাদা। ডানার অগ্রভাগ সুঁচালো। স্ত্রী পাখির পিঠ ও ডানার গোড়া গাঢ় বাদামি। মাথা, ঘাড় ধূসর। উভয়েরই ঠোঁট লম্বা কালো এবং কনীনিকা উজ্জ্বল লাল। চোখ কালো। পা লাল হলেও নখ কালো। পায়ের পেছনের আঙ্গুল নেই। পা সাঁতার কাটার উপযোগী কিন্তু খুব বেশি সাঁতার কাটতে অভ্যস্ত নয়। লালঠেঙ্গি উড়তেও তেমন ওস্তাদ নয়। অত্যন্ত ধীরে ধীরে ওড়ে। এদের গলার আওয়াজ কর্কশ। তীক্ষ্ন বাঁশির সুরের মতো। উড়তে উড়তে ‘কিপ কিপ’ সুরে ডাকে। উত্তেজিত হলে ডাকে ‘চেক-চেক-চেক’ সুরে।
প্রধান খাবারঃ লালঠেঙ্গি জলচর পাখি। তবে এরা সাঁতরে খাবার সংগ্রহ করে না। হাঁটু পরিমাণ পানিতে দাঁড়িয়ে জলজ পোকামাকড়, কেঁচো, ছোট শামুক ইত্যাদি শিকার করে। এ ছাড়াও পোকামাকড় খাওয়ার লোভে লাঙ্গল দেয়া ক্ষেতে ওরা বিচরণ করে। এরা একা কিংবা দলবদ্ধভাবেও বিচরণ করে। স্বগোত্রীয় ছাড়াও অন্য প্রজাতির পাখিদের সঙ্গে এরা সহজেই মিলে-মিশে শিকার খোঁজে। প্রজনন সময় জুন থেকে জুলাই। মাটির ওপরে কিংবা কচুরিপানার ওপর বাসা বানায়। বাসা বানাতে ব্যবহার করে শুকনো জলজ লতা-পাতা। ডিম পাড়ে ৩-৪টি। ডিমের রঙ ধূসর, তার ওপর কালো ছোপ। ডিম ফোটাতে সময় নেয় ২০-২১ দিন।
লেখকঃ আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামিস্ট ও বন্যপ্রাণী বিশারদ।