
রামগাঙ্গরা যেমনি চঞ্চল তেমনি ফুর্তিবাজ। একদণ্ড স্থির থাকার ফুরসত নেই। সারাদিন গাছে গাছে, ডালে ডালে নেচে বেড়ায়। দেখতে চড়ুই পাখির মতো। অনেকে চড়ুই বলে ভুলও করেন। তবে চড়ুইয়ের চেয়ে বেশ সাহসী। মাঝে মাঝে চড়ুই পাখিকে আক্রমণ করতেও দেখা যায়। ডিমে তা দেয়ার সময় শত্রু কাছে বিড়লে থু থু (আঠালো পদার্থ) ছিটিয়ে দেয়। গভীর জঙ্গল এদের অপচন্দ হলেও ঘন ঝোপ এদের বেশ পছন্দের জায়গা। এখনও দেশের সব এলাকাতেই কম-বেশি এদের নজরে পড়ে। কারণ পাখি হিসাবে এরা বেশ চালাক। সহজে ফাঁদে পা দেয় না এরা।
পাখিটার বাংলা নামঃ রামগাঙ্গরা, ইংরেজি নামঃ গ্রেট টিট (Great tit), বৈজ্ঞানিক নামঃ Parus Major, গোত্রের নামঃ পারিদি | বাংলায় আরো কিছু নাম রয়েছে। অঞ্চলভেদে তা ডাকা হয়। যেমন-রামঙ্গা, রাম গাংরা, ধূসরতিত ইত্যাদি।
আরও পড়ুন…
•সিঁদুর সিঁথি তিতপাখি
•সবুজ পিঠ রামগাঙ্গরা
লম্বায় এরা ১২ থেকে ১৩ সেন্টিমিটার। মাথা কুচকুচে কালো। গালের দুই পাশে ত্রিভুজ আকৃতির সাদা ছোপ। চোখের উপরি ভাগ থেকে কালো রংটা ঘাড় পর্যন্ত গিয়ে ঠেকেছে। ডানা গুটিয়ে নিলে উপরি ভাগের রং সুরমা-ধূসর। শরীরে অন্যান্য পালক ধূসর। ঠোঁটের নিচ থেকে চওড়া ফিতার মতো কুচকুচে কালো টান বুক-পেট হয়ে লেজের গোড়ায় গিয়ে ঠেকেছে। এ দাগটি সমান নয়। বুকের দিকে সামান্য সরু। চোখের রং গাঢ় বাদামি। লেজের উপরটা কালচে। তবে লেজের প্রান্তের কিছু পালক সাদা। চঞ্চু ত্রিকোনা। পা সিসে রঙের। স্ত্রী-পুরুষ দেখতে একই রকম।
প্রধান খাবারঃ কীটপতঙ্গ, ফুলের কুঁড়ি এদের প্রিয় খাবার। আখ গাছের মাজরা পোকাও এদের প্রিয় খাবার। খাওয়ার সময় এরা স্বগোত্রীয়দের সঙ্গে ‘হুই-চিচি, হুই-চিচি, হুই-চিচি… চিচিচি-চিক…টিটিটি-টিট্’ সুরে ডাকাডাকি করে। রেগে গেলে ‘হিস হিস’ শব্দ করে। প্রজনন সময় এপ্রিল থেকে জুলাই। এরা দুই-তিন দফায় ডিম দেয়। সেক্ষেত্রে আগস্ট পর্যন্ত সময় নেয়। গাছের কোটরে বাসা বানায়। বাসা বানাতে ব্যবহার করে শুকনো ঘাস, কলা পাতার আঁশ কিংবা পাটের আঁশ। ডিম পাড়ে ৪-৬টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৮ দিন। শাবক স্বামলম্বী হতেও সময় নেয় ১৮ দিন।
লেখকঃ আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামিস্ট ও বন্যপ্রাণী বিশারদ।