কমলাদামা | Orange Headed Thrush | Zoothera citrina

629
কমলাদামা
কমলাদামা | ছবি: তৌহিদ পারভেজ বিপ্লব

কমলাদামা আমাদের প্রতিবেশী হলেও অনেক ভীতু এবং লাজুক স্বভাবের। স্বভাবে লাজুক হলেও এরা মানুষের একেবারে কাছাকাছি থাকতে পছন্দ করে। মানুষও খুব একটা ক্ষতি করে না এদের। বরং আদর করে নানা নামে ডাকে। কেউ ডাকে কমলা বউ, কেউ ডাকে কমলাফুলি, আবার অনেকেই ডাকে কমলা দোয়েল নামে। তবে ‘কমলাদামা’ নামেই এটি অধিক পরিচিত। বাংলাদেশের সর্বত্র কমলাবউ পাখির বিচরণ। কম-বেশি ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে সবখানেই।  এদের অধিকাংশই বিচরণ করে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে।

তাই অনেকের ধারণা, কমলাবউর বাস ওই অঞ্চলেই। প্রকৃতপক্ষে তা সঠিক নয়। রাজধানীর অপেক্ষাকৃত নিরিবিলি স্থানেও এদের দেখা মেলে। বোটানিক্যাল গার্ডেনে ২০১০ সালে একবার দেখেছি। তারপর আর দেখিনি। বাসা তৈরির উপযুক্ত গাছপালার অভাবে রাজধানী থেকে এরা ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে। কমলাবউর রূপ যেমন, তেমনি গুণ। বিভিন্ন ধরনের কসরত দেখাতে পটু এরা। বিশেষ করে হিংস্র পোকামাকড় কিংবা ছোট সাপের বাচ্চা শিকারের কৌশল বেশ দর্শনীয়। অনেকটা নেচে-নেচে শিকার ধরে।

এ পাখির ইংরেজি নামঃ অরেঞ্জ হেডেড থ্রাস (Orange Headed Thrush), বৈজ্ঞানিক নামঃ জুথেরা সিট্রিনা (Zoothera citrina), গোত্রঃ মুস্কিকাপিদি।

আরও পড়ুন…
•নীল শিলাদামা •কালচে দামা •লালগলা দামা
•ধূসর দামা •ধূসর ডানা কালো দামা •সাদাভ্রু দামা
•লম্বাঠোঁটি দামা •কালোবুক দামা •সাদাঘাড় কালো দামা

কমলাবউ দোয়েল আকৃতির পাখি। হাঁটেও দোয়েলের মতো লাফিয়ে লাফিয়ে। ফলে অনেকে এদের ‘দোয়েল’ বলে ভুল করে। লম্বায় এরা ২০ থেকে ২২ সেন্টিমিটার। স্ত্রী-পুরুষ পাখি দেখতে একরকম মনে হলেও সৌন্দর্যের দিক থেকে এগিয়ে রয়েছে পুরুষ পাখি। কমলাবউ পাখির মাথা, ঘাড়, গলা ও বুক কমলা-বাদামি। তলপেট ও লেজের নিচের দিক সাদাটে। চোখের মণি গাঢ় পিঙ্গল। চোখের নিচ বরাবর পরপর তিনটি সাদা ছোপ। পিঠের পালক নীলাভ ছাই বর্ণের। পায়ের রঙ ফিকে গোলাপি। স্ত্রী পাখির বুকের রঙ সামান্য ফিকে। পিঠের ওপরের পালক ছাই ধূসর।কমলাবউর প্রজনন সময় মার্চ থেকে মে। এ সময় স্ত্রী-পুরুষ পাখি একসঙ্গে চলাফেরা করে। অন্য সময় এরা মূলত আলাদা বাস করে।

বাসা বাঁধার ব্যাপারে এরা যথেষ্ট খুঁতখুঁতে। পছন্দসই জায়গা খুঁজে পেলে তবে বাসা তৈরি করে। বাসার আদল চায়ের কাপের মতো। এমনকি চায়ের কাপের মতো হাতলও বানায়। হাতলটা দিয়ে গাছের ডালপালার সঙ্গে মজবুত করে বেঁধে রাখে। বাসা তৈরির উপকরণ শুকনো ঘাস, লতাপাতা ইত্যাদি। আর যাই হোক বাসাটা এরা খুবই সুন্দরভাবে বানাতে পারে। বাসা বানানো হলে তিন থেকে চারটি ডিম পাড়ে। স্ত্রী-পুরুষ পাখি পালা করে ডিমে তা দেয়। ডিম ফুটে বাচ্চা বেরোতে সময় লাগে ১৪-১৫ দিন। শান্ত স্বভাবের এ বাচ্চাদের স্বাবলম্বী হতে মাসখানেক লেগে যায়। তবে উড়তে শিখতে সময় নেয় ২০ দিনের মতো। তারপর মা-বাবার সঙ্গে থেকে ধীরে ধীরে শিকারের কৌশল রপ্ত করে।

প্রধান খাবারঃ মূলত কীটপতঙ্গই এদের। সুযোগ পেলে কেঁচো, সাপের ছোট বাচ্চা শিকার করতে এরা পিছপা হয় না। খেজুরের রস কমলাবউর বেশ প্রিয়। রসের স্বাদ নিতে প্রায়ই খেজুর গাছের আশপাশে ঘুরঘুর করে।

লেখকঃ আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামিস্ট ও বন্যপ্রাণী বিশারদ।