দেখতে হুবহু গৃহপালিত কোয়েল পাখির মতো। এরা আমাদের দেশের প্রাক্তন আবাসিক পাখি। এক সময়ে ঢাকার আশপাশের গ্রামের তৃণভূমিতে বিচরণ ছিল। হালে বাংলাদেশে দেখা যাওয়ার রেকর্ড নেই। তবে এদের বৈশ্বিক বিস্তৃতি ভারত, পাকিস্তান, মিয়ানমার, চীন, থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন, এবং মালয়েশিয়া পর্যন্ত। এ ছাড়াও আফ্রিকা মহাদেশের কিছু কিছু জায়গায় এদের বিস্তৃতি রয়েছে। প্রজাতিটি বিশ্বে বিপন্মুক্ত হলেও বাংলাদেশে অপ্রতুল-তথ্য শ্রেণীতে রয়েছে। এরা বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে সংরক্ষিত।
মূলত ‘ছোট নাটাবটের’ খাদ্যের সন্ধানে তৃণভূমির আশপাশের ঝোপে ঘুরে বেড়ায়। ছোটাছুটি করে ঝোপের ফাঁকফোকরে। একাকী কিংবা জোড়ায় বিচরণ করে। ঝরাপাতা উল্টিয়ে পোকামাকড় খুঁজে বেড়ায়। আবার তৃণভূমিতে ঘুরে শস্যদানা কিংবা ঘাসের বীজ খায়। এরা স্বভাবে কিছুটা হিংসুটে। নিজেদের এলাকায় স্বগোত্রীয়দের অনুপ্রবেশ সহজে মেনে নেয় না। ভয়-ভীতি দেখিয়ে তাড়িয়ে দেয়। প্রয়োজনে যুদ্ধংদেহী রূপ ধারণ করলেও সহজে আক্রমণ করে না। অর্থাৎ যে করেই হোক অনুপ্রবেশকারীকে তাড়ানো চাই-ই চাই। প্রজনন মৌসুমে পুরুষ পাখির মাঝে অস্থিরতা বেড়ে যায়। বেড়ে যায় হাঁকডাকও। এ সময় ‘ডররর-র-র-র-র..’ সুরে ডাকতে থাকে। মজার বিষয়টি হচ্ছে, স্ত্রী পাখি ডিম পেড়ে কেটে পড়ে। পুরুষ পাখিকে তখন একাই ডিমে তা দিতে হয়। বাচ্চা ফুটিয়ে লালন-পালনও করতে হয় পুরুষ পাখিকে একাই।
পাখির বাংলা নামঃ ছোট নাটাবটের, ইংরেজি নামঃ ক্যারিচেন বাটন কোয়েল, (Kurrichane Buttonquail),বৈজ্ঞানিক নামঃ Turnix sylvatica |
লম্বায় ১৩ সেন্টিমিটার। ওজন ৪০ গ্রাম। স্ত্রী-পুরুষ দেখতে একই রকম। আকারে স্ত্রী পাখি খানিকটা বড়। উভয়ের মাথার চাঁদি বাদামি। ঘাড়, মরচে রঙা। পিঠ লালচে কালো। কাঁধ-ঢাকনিতে পীতাভ ডোরা। গলা সাদা। বুক কমলা-পীতাভ। লেজতল-ঢাকনি সাদাটে। ঠোঁট ফ্যাকাসে। চোখ হালকা হলুদ। পা ও পায়ের পাতা ধূসর নীল। অপ্রাপ্তবয়স্কদের পিঠ লালচে-বাদামি। দেহতল ফ্যাকাসে পীতাভ। ঘাড়ের পাশে ও বুকে কালো চিতি রয়েছে।
প্রধান খাবারঃ শস্যদানা, ঘাস বীজ, কালো পিঁপড়া ও পোকামাকড়। প্রজনন মৌসুম বছরের যে কোনো সময়। নিজেরা পা দিয়ে মাটি খুঁড়ে ঘাস-লতা বিছিয়ে বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ৪টি। ডিম ফুটতে সময় ১২ দিন। শাবকের গায়ে ওড়ার পালক গজায় দুই সপ্তাহের মধ্যে।
লেখকঃ আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।